২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বড়ঞা থেকে তৃণমূলের প্রতীকে জিতেছেন জীবনকৃষ্ণ। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র নজরে ছিলেন বহু দিন ধরেই। শুক্রবার তাঁর বড়ঞার বাড়িতে হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। তিনি জীবনকৃষ্ণ সাহা। পরিচয় বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক, সঙ্গে প্রভাবশালীও বটে। ইতিমধ্যে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে তাঁর পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা, সঙ্গে দু’টি মোবাইল ফোন বাড়ির কাছের পুকুরে ফেলে দেওয়া।
এমন কৌশলী বিধায়কের বিধানসভায় পারফরমেন্স কেমন? ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বড়ঞা থেকে তৃণমূলের প্রতীকে জিতেছেন জীবনকৃষ্ণ। কিন্তু গত দু’বছরের বিধায়ক জীবনে বিধানসভার অন্দরে ছাপ ফেলতে পারেননি তিনি। বরং, শান্তশিষ্ট স্বভাবের জীবনকৃষ্ণ বিধানসভায় আসেন চুপি চুপি, চলেও যান চুপি চুপি। নিজের কয়েক জন অনুগামীকে সঙ্গে নিয়েই বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দিতে আসেন। এই দু’বছরের সময়কালে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ তো দূর, এখনও নিজের বিধানসভার জন্য দাবিদাওয়া বা প্রশ্নও করে উঠতে পারেননি এই যুবনেতা।
বিধানসভা অধিবেশনে কোনও বিধায়ক প্রশ্ন করতে চাইলে, তাঁকে সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন আগেই জমা দিতে হয়। বিধানসভা সূত্রে খবর, এমন প্রশ্ন এখনও আসেনি বিধায়ক জীবনের তরফ থেকে। প্রশ্নোত্তর পর্ব কিংবা কলিং অ্যাটেনশন পর্বেও কখনও অংশ নেননি বিধায়ক। তাই বিধানসভায় তৃণমূল পরিষদীয় দলের তরফে তাঁর নাম কোনও আলোচনায় বক্তা হিসাবে শামিল করা হয়নি। তা ছাড়া, অধিবেশন চলাকালীন বিধায়করা মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষের ঘরে এসে কোনও বিষয় বক্তৃতা করার সুযোগ চান বলেও জানা যায়। কিন্তু বড়ঞার বিধায়ককে কখনও কোনও আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য দরবার করতে দেখেনি তৃণমূল পরিষদীয় দল। এক কথায় গত দু’বছরে রাজ্য বা বড়ঞার কোনও বিষয় নিয়ে বিধানসভায় সরব হননি বিধায়ক। অধিবেশন ছাড়া বিধানসভার কোনও কমিটির বৈঠকে অংশ নিতে এলেও, বৈঠকে যোগ না দিয়েই কোনও ক্রমে খাতায় হাজিরার স্বাক্ষর দিয়েই বেরিয়ে যান তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। এমন একজন বিধায়ককে তাই বিধানসভায় নিজেদের কাজে লাগানোর কথা মাথায় আসে না তৃণমূল পরিষদীয় দলের।
এমনিতেই কম কথার মানুষ জীবন। বিধানসভায় অন্য বিধায়করা যখন দলের অন্য বিধায়কদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর জন্য পারস্পরিক আলোচনায় মশগুল হন, সে ক্ষেত্রেও নিজেকে কিছুটা দূরেই রাখেন বড়ঞার বিধায়ক। তৃণমূল বিধায়কদের জন্য বরাদ্দ ঘরে বসার চেয়ে বেশি সময় কাটান বিধানসভার লবিতে, তাও আবার নিজের বাছাই অনুগামীদের সঙ্গে। নিজের জেলা মুর্শিদাবাদের বিধায়কদের সঙ্গে তবু কিছুটা কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। বাকিদের সঙ্গে নয়। তবে যোগাযোগ রাখেন বীরভুম জেলা থেকে নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে বীরভুমের এক তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘‘কেষ্টদা (অনুব্রত মণ্ডল)-র স্নেহের পাত্র জীবনকৃষ্ণ। তাই বীরভূম জেলার বিধায়কদের সঙ্গে ওর সম্পর্ক রয়েছে। এর বেশি বলতে পারব না।’’