প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রের সংশোধিত মোটরযান আইন রূপায়ণের জন্য সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের জবাব এখনও আসেনি। বাংলায় সেই আইনও চালু হয়নি। তার আগে সংশোধিত আইন মেনে জরিমানা আদায় হচ্ছে শিয়ালদহ আদালতে!
১৯৮৯ সালের কেন্দ্রীয় মোটরযান আইনের সংশোধনী বিল সংসদের দুই কক্ষে পাশ হয় গত অগস্টে। দুর্ঘটনা কমাতে এবং মানুষ যাতে ট্রাফিক আইন না-ভাঙে, তা নিশ্চিত করতে সংশোধিত আইনে জরিমানার পরিমাণ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দশ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে আগে ৫০০ টাকা জরিমানা হত। এখন তা বেড়ে হয়েছে দু’হাজার টাকা। বিমা ছাড়া গাড়ি চালালে আগে দিতে হত ৫০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে দু’হাজার। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে আগে ছিল ৫০০ টাকা জরিমানা হত, এখন পাঁচ হাজার টাকা হয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি চালালে আগে এক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হত। নতুন আইনে তা পাঁচ হাজার টাকা করা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে সব রাজ্যে ওই আইন চালু করার জন্য নির্দেশিকাও জারি করেছে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক।
রাজ্যের পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, অগস্টের শেষ সপ্তাহে বিধানসভায় পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে দেন, রাজ্যে ওই আইন এখনই চালু করা হচ্ছে না। রাজ্য প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছেন, এ রাজ্যে গরিব মানুষের সংখ্যা প্রচুর। তাঁদের উপরে এখনই বাড়তি বোঝা চাপাতে চাইছেন না শীর্ষ কর্তারা।
এই আইনে জরিমানার বর্ধিত অঙ্ক নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মতোই সংশোধিত আইন বলবৎ করেনি পঞ্জাব, রাজস্থান, তেলঙ্গানা, কেরলের মতো অ-বিজেপি দল শাসিত রাজ্য। সেই তালিকায় রয়েছে ছত্তীসগঢ়ও। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতও ওই আইন পুরোপুরি না-মেনে নিজেদের মতো পরিমার্জন করে জরিমানার অঙ্ক কিছুটা কমিয়ে জনগণকে রেহাই দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। তা হলে শিয়ালদহ আদালতে সংশোধিত আইন মেনে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে কেন?
আরও পড়ুন: ইংরেজির ভিত পোক্ত করতে নয়া ব্যাকরণ বই স্কুলে
ওই আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় (এসিজিএম) ম্যাজিস্ট্রেট শুভদীপ রায়ের এজলাসে মুখ্য সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী সম্প্রতি জানান, রাজ্য প্রশাসন এখনও সংশোধিত আইন রূপায়ণের সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু বিচারক সরকারি কৌঁসুলিকে জানান, কেন্দ্রীয় আইন মানতে তিনি বাধ্য। সেই আইন মানা হবে না বলে আইন বিভাগের কোনও আধিকারিক তাঁকে জানাননি। সেই আইন অনুযায়ী কেউ জরিমানার টাকা জমা দিতে চাইলে তা গ্রহণ করার জন্য আদালতের কর্মীদের অনুমতি দিয়েছেন ওই বিচারক।
ওই আদালত সূত্রের খবর, নতুন সংশোধিত আইন অনুযায়ী যদি কেউ জরিমানা না-দিয়ে মামলা লড়তে চান, তা হলে কোন আইনজীবী সরকারের পক্ষে সওয়াল করবেন, তা জানতে চেয়ে ওই বিচারক সম্প্রতি কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু সিপি-র কার্যালয় থেকে সেই চিঠির জবাব এখনও পাননি বিচারক।