প্রতীকী ছবি।
রাত তখন ১টা। একটি ছোট গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিলেন দু’জন। গাড়িতে নম্বরপ্লেট ছিল না। গাড়িতে একটি গরুও ছিল। কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার পুটিমারী-ফুলেশ্বরীর কেদারহাট এলাকার কয়েক জন বাসিন্দার সন্দেহ হয়, ওই দু’জন গরু চোর। তার পরেই ঝাঁপিয়ে পড়ে জনতা। বুধবার গভীর রাতে জনতার বেধড়ক মারধরে মৃত্যু হয় দু’জনেরই। তাঁদের নাম প্রকাশ দাস (৩৫) এবং রবিউল ইসলাম (৪০)। প্রকাশের বাড়ি মাথাভাঙায়, রবিউলের দিনহাটায়। ওই দু’জনকে আগেও গরু চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বুধবার রাতে পুলিশ পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। সেখানেই তাঁদের মৃত্যু হয়।
তার পরে রাতেই ১৫ জনকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালেও বিরাট পুলিশ বাহিনী এলাকায় যায়। সকাল থেকে কেদারহাটে দোকান-পাট বন্ধ। অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। পুটিমারী-ফুলেশ্বরী গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান আলোনা ইয়াসমিন বলেন, “নির্দোষ গ্রামবাসীদের কাউকে যাতে গ্রেফতার করা না হয়, সেই আবেদন পুলিশের কাছে জানিয়েছি। আগে তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করুক পুলিশ।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে।”
কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে গরু পাচারের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। অভিযোগ, শীত পড়তেই কুয়াশার আড়ালে পাচার বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এই সময়েই গরু চুরির অভিযোগও উঠতে শুরু করে। গত কয়েক বছরে একাধিক বার গরু চুরি নিয়ে তুমুল গন্ডগোল হয়, তবে গণপিটুনিতে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেনি। সম্প্রতি ওই এলাকা এবং পাশের একাধিক এলাকায় গরু চুরির অভিযোগ উঠছিল। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন মানুষ। এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, তারই প্রকাশ ঘটেছে গণপিটুনিতে। ওই রাতে পিকআপ ভ্যান দেখেই সন্দেহ হয় তাঁদের। কয়েক জন গাড়ি আটক করেন। তার মধ্যে একটি গরু দেখার পরেই শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। গাড়ির নম্বরপ্লেট না দেখে সন্দেহ আরও বাড়ে। এর পরেই শুরু হয় মারধর। একটি মাঠের মধ্যে গরুটিকে ছেড়ে দিয়ে গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয়। কিন্তু প্রহৃত দু’জনকে বাঁচানো যায়নি।