ED Attacked in Sandeshkhali

রাজ্যপালের কড়া বার্তার পরেও সাড়া নেই তলবে, উদ্বিগ্ন কেন্দ্রও

সন্দেশখালিকাণ্ডের দিনে রাজ্যপালের তলব সত্ত্বেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত রাজভবনে গেলেন না রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি, রাজ্য প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্তা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪১
Share:

আহত ইডি অফিসারকে দেখতে হাসপাতালে রাজ্যপাল। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের উপরে হামলার সময়ে দীর্ঘক্ষণ পুলিশের কার্যত দেখা না মেলায় প্রশ্নে স্থানীয় প্রশাসন। তদন্তে যাওয়া সরকারি অফিসার এবং সঙ্গী সংবাদমাধ্যম এ ভাবে রক্তাক্ত হওয়ায় কড়া বিবৃতি দিয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘গণতন্ত্রে সভ্য সরকারের কর্তব্য বর্বরতা এবং অশান্তি বন্ধ করা। সরকার তার প্রাথমিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে, অবশ্যই পদক্ষেপ করবে ভারতের সংবিধান।’’ ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই সমস্ত কিছু ঘটে যাওয়ার দিনে রাজ্যপালের তলব সত্ত্বেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত রাজভবনে গেলেন না রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি, রাজ্য প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্তা।

Advertisement

সার্বিক ভাবেই এ দিন সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, মুখ্যসচিব ভগবতী প্রসাদ গোপালিকা, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী এবং ডিজি রাজীব কুমার ফোন ধরেননি।

রাত পর্যন্ত জবাব আসেনি তাঁদের পাঠানো মোবাইল-বার্তারও। বিরোধীদের একাংশের মতে, আগামী দিনে আক্রান্ত হিসেবে ইডি আদালতের দ্বারস্থ হলে, তখন সেখানে কৈফিয়ত দিতে হবে রাজ্য প্রশাসনকে।

Advertisement

এ দিন ঘটনার তীব্র নিন্দা করে রাজ্যপাল বোস বলেন, “সন্দেশখালিতে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গণতন্ত্রে সভ্য সরকারের কর্তব্য বর্বরতা এবং অশান্তি বন্ধ করা। সরকার তার প্রাথমিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে, ভারতের সংবিধান অবশ্যই পদক্ষেপ করবে। রাজ্যপাল হিসেবে যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ করব। জঙ্গলরাজ এবং গুন্ডাগিরি মূর্খদের স্বর্গেই চলতে পারে। বাংলা নৈরাজ্যের দেশ নয়।” তাঁর সংযোজন, “নির্বাচনের আগে এই হিংসা এখনই থামানো উচিত। সমাজে হিংসা রোখার দায় সরকারের। সরকার চোখ খুলে বাস্তবটা দেখুক এবং পদক্ষেপ করুক। না হলে ফল ভোগার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বাংলায় হিংসাকে শেষ করতে হবে।”

শুক্রবার দুপুরেই সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্যের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে, এ কথা রাজ্যপাল কেন ঘোষণা করছেন না, এজলাসে বসেই সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। ঘটনাচক্রে তার পরেই নবান্নকে রাজধর্ম স্মরণ করিয়ে বার্তা দেন রাজ্যপাল।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য মনে করছে, সন্দেশখালির হামলার ঘটনা আদৌ ব্যতিক্রম নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, অতীতেও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন সময়ে এ ভাবে প্রতিরোধের মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় দল বা বাহিনী। সূত্রের দাবি, অতীতে তদন্ত করতে যাওয়া সিবিআইয়ের একটি দলকে ঘরে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে দিল্লি থেকে পাঠানো দলকে একাধিক বার স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল। রাজ্যে প্রচারে এসে হামলার শিকার হয়েছেন বিরোধী নেতারাও। মন্ত্রক কর্তাদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে নিচু তলায় আইনের শাসন যে নেই, তা একের পর এক ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে এখনই রাজ্যে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ করা হবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। মন্ত্রক জানিয়েছে, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। সূত্রের মতে, আপাতত রাজ্যপালের রিপোর্টের অপেক্ষায় মন্ত্রক।

এরই মধ্যে এই ঘটনার পিছনে রোহিঙ্গাদের ভূমিকা রয়েছে বলে সরব হয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, রাজনৈতিক এই অভিযোগ কতটা সত্য, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “অতীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রোহিঙ্গাদের নাশকতায় যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ ক্ষেত্রেও রোহিঙ্গারা যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে, তা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পক্ষে বিপদ।” ঘটনাচক্রে দিন দুয়েক আগেই পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গাদের বাড়বাড়ন্তের জন্য রাজ্য প্রশাসনকে দায়ী করেছিলেন মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা।

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এত প্রশ্নের দিনে নবান্নে সরকারের শীর্ষ স্তরের ‘নীরবতা’ বিস্ময়কর। সূত্রের দাবি, এ দিন সকালে ঘটনার খবর পুলিশ নয়, বরং সংবাদমাধ্যম মারফত প্রশাসনের শীর্ষমহলে পৌঁছেছিল। অভিযোগ, তার পর থেকে কার্যত নীরব প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল। তবে রাজ্যপালের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্ত্ৰী শশী পাঁজার মন্তব্য, “পদের প্রতি যথোচিত সম্মান জানিয়েই বলছি, তাঁর বক্তব্য মেনে নিতে পারছি না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজ্য সরকার সব রকম ব্যবস্থা করে। না হলে কেন কলকাতাকে দেশের সব থেকে সুরক্ষিত শহর ঘোষণা করা হবে?” রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্যপালের কাছ থেকে মানুষ সাংবিধানিক ব্যাখ্যা শুনতে চায় না, প্রতিকার চায়।”

এ দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ওই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেও যে সংযম দেখিয়েছে, তা অবশ্য কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন এমনকি পুলিশ কর্তাদের একাংশ। সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যে ভাবে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সামনে যে ভাবে ইডির অফিসারদের হেনস্থা করা হয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, তাতে গুলি চালানোর মতো ঘটনা ঘটতে পারত বলে মনে করছেন ইডির অফিসারেরাও।

সন্ধ্যায় আক্রান্ত ইডি অফিসারদের সল্ট লেকের এক হাসপাতালে দেখতে যান বোস। সেখানে তিনি বলেন “যা হয়েছে, তা আমাদের প্রত্যেকের পক্ষে লজ্জার। এটা গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ। আক্রান্ত বাংলা। আক্রান্ত গণতন্ত্র। এটা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। সংবিধান আছে৷ দেশে আইন-ব্যবস্থা আছে। বাংলায় এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য সব রকম পদক্ষেপ করব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement