কলকাতা মাদার ডেয়ারি। ফাইল চিত্র।
ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (এনডিডিবি) হাত থেকে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে আসার পরেও নাম ছিল মাদার ডেয়ারি। এ বার সেই নাম বদলে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছানুসারে মাদার ডেয়ারির নতুন নাম হচ্ছে ‘বাংলার ডেয়ারি’। এই ‘ব্র্যান্ড’ নামে বিক্রি হবে দুধ এবং দুধজাত সব পণ্য। শুধু নাম বদল নয়, সংস্থার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণেও বড়সড় বদল আনা হচ্ছে।
সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে স্বাধীন ভাবে কাজ করার জন্য বাংলার ডেয়ারি লিমিটেড নামে একটি সংস্থা গড়া হয়েছে। সেই সংস্থা চলবে কোম্পানি আইন মেনে। নবান্নের খবর, এখনকার মাদার ডেয়ারিকে বাংলার ডেয়ারির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ রূপায়ণে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ ইতিমধ্যেই প্রাণিসম্পদ দফতরকে প্রস্তুতি চালাতে বলেছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
দুধ উৎপাদকদের সহায়ক মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতি লিটার ২৮ টাকা থেকে বেড়ে দুধের নতুন দাম হচ্ছে ৩১ টাকা। এর ফলে প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ করতে সরকারের অতিরিক্ত ১০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। এক দিকে দুধের সংগ্রহ কমে যাওয়া এবং অন্য দিকে ‘স্কিমড মিল্ক’ বা গুঁড়ো দুধের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় কাহিল দশা মাদার ডেয়ারির। কারণ, সরকার দুধের দাম বাড়াতে দিতে রাজি নয়। ফলে গত ডিসেম্বর থেকে মাসে গড়ে তিন কোটি টাকা লোকসানে চলছে সংস্থাটি। মাদার ডেয়ারির তরফে দুধের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও নবান্ন রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত দুধ উৎপাদকদের সহায়ক মূল্য বাড়াতে রাজি হয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, ‘বাংলার ডেয়ারি’ সংস্থার মধ্যে মাদার ডেয়ারিকে মিশিয়ে দিয়ে আলাদা কোম্পানি তৈরি হোক।
রাজ্য দুগ্ধ সমবায় ফেডারেশনের চেয়ারম্যান পরশ দত্ত বলেন, ‘‘সময়ের দাবি মেনেই মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আলাদা কোম্পানি তৈরি হলে দুধচাষিরা দাম পাবেন, দুধ কী দামে বিক্রি হবে, তার উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।’’
এনডিডিবি কয়েক বছর চালানোর পরে রাজ্যের হাতে মাদার ডেয়ারিকে তুলে দিয়েছিল। তখন থেকেই প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের তৈরি করে দেওয়া পরিচালন কমিটি মাদার ডেয়ারি পরিচালনা করে। তার মাথায় আছেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। কিন্তু গত আট বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর বদলে এই ডেয়ারি প্রতি বছর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়েছে।
মাদার ডেয়ারি তৈরির নেপথ্য কারিগর, প্রাক্তন এনডিডিবি-কর্তা রঘু চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে স্বাধীন ভাবে মাদার ডেয়ারি চালাতে দিলে আজও লাভের মুখ দেখা সম্ভব। আমুল পারলে মাদার ডেয়ারি পারবে না কেন?’’
প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের খবর, বাংলার ডেয়ারি লিমিটেড নামক সংস্থাটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। বোর্ডে সরকারি কর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় দু’জন শিল্পপতিরও থাকার কথা। সংস্থার কাজ শুরুর জন্য ১০ কোটি টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার।
(খবরটি প্রথম প্রকাশের সময়, কলকাতা মাদার ডেয়ারির বদলে ভুল করে দিল্লি মাদার ডেয়ারির ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত)