মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটতেই তৃণমূলের ‘ধর্মতলা চলো’র প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। বাংলার রাজনীতিতে ২১ জুলাই প্রতি বছরই নানা কৌতূহল নিয়ে আসে। ২০২৩-এর ‘শহিদ দিবস’ও তাই। কারণ, ২০২৪ সালে সঠিক সময়ে লোকসভা ভোট হলে, এটাই তার আগে শেষ ২১ জুলাই। রাজনৈতিক বৃত্তে যাঁরা ঘোরাফেরা করেন, তাঁদের অনেকের মত, তৃণমূলের এ বছরের এই বার্ষিক কর্মসূচি শুধু বাংলায় নয়, জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতেও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। ফলে কৌতূহল বাড়ছে।
সোম ও মঙ্গলবার কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে অবিজেপি দলগুলির দ্বিতীয় বৈঠক। গত জুনে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পটনার বাসভবনে বৈঠকে বসেছিলেন ১৫টি রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা। বেঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগ দিতে সোমবারই সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’দিনের এই বৈঠকের পর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বাংলায় কংগ্রেস-সিপিএমের উদ্দেশে মমতা কী বলেন সে দিকে নজর থাকবে সকলের।
বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা প্রথম থেকেই ‘একের বিরুদ্ধে এক’ ফর্মুলার কথা বলে আসছেন। পটনা-বৈঠকের পরেও একাধিক বার সে কথা বলেছেন তিনি। মমতার বক্তব্য, যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে লড়বে। কিন্তু রাজ্যের বাস্তবতায় তা কত দূর সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ওই বৈঠকে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, আম আদমি পার্টি (আপ) মিলিত হলেও রাজ্যে রাজ্যে দলগুলির মধ্যে সমীকরণ ভিন্ন। বাংলায় তৃণমূল আর কংগ্রেসের সম্পর্ক যেমন ‘আদায়-কাঁচকলায়’ পৌঁছেছে, তেমনই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে যতই সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির বন্ধুত্ব থাকুক, কেরলের রাজনীতিতে বামেদের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসই। বিজেপি যদিও মনে করে, এই ধরনের জোটের ‘গল্প’ আসলে ‘সোনার পাথরবাটি’। গেরুয়া শিবিরের ব্যাখা, রাজ্যে রাজ্যে মারামারি করে সর্বভারতীয় স্তরে জোট কী ভাবে সম্ভব!
যদিও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করেন, দু’জনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক অনেক সমীকরণ বদলে দিতে পারে। তাঁদের বক্তব্য, মমতা ধর্মতলার সমাবেশ থেকে বিধান ভবন (বাংলায় প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর)-কেও বার্তা দিতে পারেন। ইতিমধ্যেই শোনা যাচ্ছে, মেঘালয়ের দু’টি আসনে লড়তে চেয়ে কংগ্রেসকে বাংলায় জোড়া আসন ছাড়ার শর্ত দিতে পারে তৃণমূল। শাসকদলের তরফে সরকারি ভাবে এখনও এই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। প্রদেশ কংগ্রেসের বেশির ভাগ নেতা স্পষ্টই বলছেন, তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে কোনও ভাবেই ভোটে লড়া সম্ভব নয়। তবে হাইকম্যান্ডের চাপ এলে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকা যাবে কি না তা নিয়েও সন্ধিহান তাঁরা।
২০১৮ সালের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ব্রিগেড সমাবেশ ডেকেছিলেন মমতা। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত অসংখ্য অবিজেপি দলের নেতৃত্বকে সেই মঞ্চে হাজিরও করিয়েছিল তৃণমূল। এ বার বর্ষার সমাবেশ থেকে মমতা শীতের কর্মসূচির ডাক দেবেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে।
অন্য দিকে, পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয়ের পর এই প্রথম বড় কর্মসূচি। শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একটা উৎসবের মেজাজ রয়েছে। যদিও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কোনও ভাবেই ২১ জুলাইয়ের সমাবেশকে বিজয় সমাবেশে পরিণত করা যাবে না। শহিদ স্মরণের যথার্থতা যাতে নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারেও জেলা ও ব্লকের নেতাদের সতর্ক করেছে তৃণমূল।
বেশির ভাগ বছরেই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে অন্য দলের নেতানেত্রী বা তারকাদের তৃণমূলে শামিল হওয়ার একটা পর্ব থাকে। এ বারের ধর্মতলার সমাবেশ মঞ্চ তেমন কোনও পর্বের সাক্ষী থাকবে কি না তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে।
সব মিলিয়ে, দলকে আগামী একটা বছর কোন দিশায় চালাতে চাইছেন মমতা, এ বারের ২১ জুলাই তিনি কী কী বার্তা দেন দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের, তা নিয়ে অন্যান্য বারে চেয়ে অনেক বেশি কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারণ, লোকসভা ভোট আসন্ন।