মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলছেন সন্দেশখালির মহিলারা। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালির মহিলাদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে রাজ্য জুড়ে তো বটেই, জাতীয় স্তরেও সুর চড়াতে শুরু করেছে বিরোধীরা। একে বাংলার বিরুদ্ধে কুৎসা ও অপপ্রচারের চেষ্টা বলে ব্যাখ্যা করল শাসকদল তৃণমূল। তাদের প্রশ্ন, সন্দেশখালির মহিলারা যদি সত্যিই এত দিন ভয়ে চুপ থেকে থাকেন, তা হলে বিরোধী দলের নেতারা কেন তা জনসমক্ষে আনেননি? এমন তো নয় যে, তাঁরাও ভয় পেয়ে চুপ ছিলেন! সন্দেশখালির ঘটনায় বিরোধীরা যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি করতে শুরু করেছে, তৃণমূলও চোপড়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এনে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিরোধী দল বিজেপির উপর। চোপ়ড়ায় শিশুমৃত্যুর ঘটনায় বিএসএফের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগেরও পাল্টা দাবি করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে দফায় দফায় অশান্তির ঘটনা ঘটেছিল সন্দেশখালিতে। রাস্তায় নেমে আন্দোলনে শামিল হন গ্রামের মানুষ। সেই সব বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একেবারে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল বহু মহিলাকে। তাঁদের অভিযোগ ছিল, এলাকার কমবয়সি সুন্দরী মহিলাদের ‘আলাদা’ চোখে দেখতেন শাহজাহানের শাগরেদ শিবপ্রসাদ হাজরার বাহিনীর লোকেরা। জোর করে তাঁদের মিটিং-মিছিলে ডেকে নিয়ে যাওয়া তো বটেই, রাতের দিকেও বাড়িতে ডেকে পাঠানো হত। না গেলেই দেওয়া হত হুমকি। শ্লীলতাহানিরও অভিযোগ তুলেছিলেন মহিলাদের একাংশ। সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সোমবার সন্দেশখালি গিয়েছিলেন রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দল। সন্দেশখালি ঘুরে আসার পর রাজ্যের কমিশনের বক্তব্য ছিল, এমন কোনও মহিলাকে পাওয়া যায়নি যিনি প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছে। মঙ্গলবার সন্দেশখালি যায় জাতীয় মহিলা কমিশন। বুধবার তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, রাজ্য মহিলা কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে, কার্যত একই রিপোর্ট দিয়েছে জাতীয় কমিশনও। কুণাল বলেন, ‘‘শুধু রাজ্য মহিলা কমিশন নয়, জাতীয় মহিলা কমিশনও বলছে, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি যে যিনি প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন।’’
এর পরেই কুণালের বক্তব্য, মহিলাদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ বিরোধীরা যেটা করছেন, সেটা অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়। বাংলার ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘‘যদি সত্যিই এ রকম হয়ে থাকে যে, মহিলারা এত দিন ভয় পেয়ে কিছু বলেননি, তা হলে আমার প্রশ্ন, বিরোধীরা কেন চুপ ছিলেন? সিপিএমের নিরাপদ সর্দার বা বিজেপির বিকাশ সিংহেরা কেন চুপ ছিলেন? যদি সত্যিই মহিলাদের উপর কোনও অত্যাচার হয়ে থাকে, তার জন্য প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ করবে। করছেও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা উঠে এসেছে, তাতে স্থানীয় কিছু লোকেদের উপরেই যাবতীয় অভিযোগ। রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে তো কোনও ক্ষোভ নেই।’’
সন্দেশখালিকাণ্ডে বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগের যে দাবি তুলেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কেন পদত্যাগ করবেন? উনি উন্নয়নের কান্ডারি। বিরোধীরা যদি মনে করেন এই দাবি ন্যায্য, তা হলে চোপড়ায় চার শিশুমৃত্যুর ঘটনায় তো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ করা উচিত। ওই ঘটনায় বিএসএফের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে।’’