অভিনেত্রী-নেত্রী সায়নী ঘোষ। ফাইল চিত্র ।
প্রায় ১১ ঘণ্টা জেরার পর শুক্রবার বেশি রাতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দফতর থেকে বেরিয়েছিলেন অভিনেত্রী-নেত্রী সায়নী ঘোষ। তার পর দিন, শনিবার তৃণমূলের পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারকারীদের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে দলের তরফে, দেখা যাচ্ছে তাতে নাম নেই দলের যুব সংগঠনের সভানেত্রীর। শনিবার জুলাই মাসের প্রথম দিনেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারকারীদের তালিকা প্রকাশ করেছে শাসক দল তৃণমূল। তাতে দলের প্রথমসারির নেতানেত্রীদের নাম রয়েছে। কিন্তু নাম নেই সায়নীর।
তৃণমূলের তরফে গত বুধবার পর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোটে নামী প্রচারকারীদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, তাতে অবশ্য নাম ছিল এই অভিনেত্রী-রাজনীতিকের। বৃহস্পতিবার ইদ উৎসবের কারণে তৃণমূলের তারকা প্রচারকারীরা প্রচারে নামেননি। আর শুক্রবার ইডির তলবের কারণে তাঁকে ওই তালিকায় রাখা হয়নি। দেখা যাচ্ছে, ইডি-র জেরা থেকে বেরিয়ে এলেও শনিবারও সায়নীকে প্রচারকারীদের তালিকায় রাখা হয়নি। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার তাঁকে হাজিরার দেওয়ার নোটিস পাঠিয়েছিল ইডি। ঘটনাচক্রে, বুধবারের তালিকায় নাম থাকলেও ওইদিন আর ভোটের প্রচারে দেখা যায়নি সায়নীকে। ইডির তলবি নোটিস পাওয়ার খবর চাউর হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগই করা যাচ্ছিল না। প্রচার তো দূর অস্ত, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না তৃণমূলের নেতাদের একাংশও। কিন্তু শুক্রবার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সায়নী পৌঁছে যান সিজিও কমপ্লেক্সে। জেরার মুখোমুখি হওয়ার আগে তিনি জানিয়েছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার নোটিসে তাঁকে জেরার জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই মুক্তি পেয়েছে বিধায়ক-পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘আবার প্রলয়’-এর ‘টিজার’। ওই সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সায়নী। কিন্তু সেই প্রসঙ্গেও কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি এই অভিনেত্রী-যুবনেত্রী। তবে শুক্রবার ইডি-র জেরার পর তাঁকে ‘বিধ্বস্ত’ দেখায়নি। বরং তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে উপস্থিত সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তদন্তের কাজে ১০০ শতাংশ সহযোগিতা করবেন। যতবার ডাকা হবে, তত বারই আসবেন। দরকারে সিজিও-তে ২৪ ঘণ্টা থাকবেন।
প্রসঙ্গত, আগামী বুধবার সায়নীকে আবার ডেকেছে ইডি। শুক্রবার তাঁর কাছে বিভিন্ন নথিপত্র চাওয়া হয়েছিল। বুধবার তাঁকে আরও নথিপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। ইডি-র একটি সূত্রের দাবি, শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সায়নীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। তার পরে সেটি পাঠানো হয়েছিল দিল্লিতে, ইডি-র সদর দফতরে। সেখান থেকে ‘অনুমোদন’ আসার পরে তাঁকে আবার জেরা করা শুরু হয়। যা চলে বেশি রাত পর্যন্ত।
ঘটনাচক্রে, পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার শেষ আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার সময়। কারণ, এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে শনিবার এক দফাতেই ভোট হবে। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ। আবার তার ২৪ ঘণ্টা আগে সায়নী যাবেন ইডি দফতরে। ফলে তাঁকে আর পঞ্চায়েতের প্রচারে ব্যবহার করা হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় থাকছে। শনিবার তাঁর নাম তালিকায় না থাকায় সে প্রশ্ন আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।
এখন দেখার, আদালতের নির্দেশে ভোটের দফা বৃদ্ধি হলে সায়নীকে ভোটের প্রচারে ব্যবহার করে কি না তৃণমূল। অনেকে মনে করছেন, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে খানিকটা ‘কোণঠাসা’ তৃণমূল। দলের শীর্ষনেতৃত্ব বিষয়টির রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন। ঘটনাচক্রে, তার মধ্যেই সায়নীকে ওই বিষয়ে জেরা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি প্রচারে নামলে তার ফল কেমন হবে, তা নিয়ে খানিক সংশয়ে দলীয় নেতৃত্ব। সে কারণেই শনিবারের তালিকায় তাঁর নাম নেই। সেই কারণেই তাঁকে আর পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে ব্যবহার করা না-ও হতে পারে।
তবে সায়নীর হিতৈষীদের বক্তব্য, সায়নী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ‘অভিযুক্ত’ নন। তিনি বলিষ্ঠ ভাবেই ইিডি-র জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন। ফলে তিনি প্রচার করলে কোনও ‘বিপরীত’ ফলাফল হবে, তা নয়। এই মহলের দাবি, আগামী বুধবার জেরায় হাজির হওয়ার আগে সায়নীকে আরও নথিপত্র জোগাড় করতে হচ্ছে। তিনি আগামী কয়েক দিন সেই কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন। তা-ই তাঁকে পঞ্চায়েতের প্রচারে আপাতত রাখা হচ্ছে না। তবে তৃণমূলের একাংশ দেখতে চায় রবি, সোম বা মঙ্গলবার সায়নীকে প্রচারে পাঠানো হয় কি না। তার আগে তারা ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নয়।
মঙ্গলবার সায়নীকে যখন নোটিস পাঠানো হয়, তখন তিনি পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের মাঝেরগ্রামে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। ভোটের প্রচারে থাকাকালীনই তিনি ইডির নোটিসের বিষয়টি জানতে পারেন। ওই দিন রাতে সমাজমাধ্যমে নিজের প্রচারে অংশ নেওয়ার ছবিও পোস্ট করেছিলেন তিনি। বুধবার তাঁর প্রচারসূচি ছিল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর বিধানসভা এলাকায়। কিন্তু নোটিসের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সায়নীকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। প্রচারেও যাননি তিনি। মঙ্গলবারের পর তাঁকে একেবারে দেখা গেল শুক্রবার সিজিও কমপ্লেক্সে।