ছবি : শাটারস্টক।
আয়ুর্বেদ তো বটেই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও আমলকির গুণের কথাই বলা হয়েছে বেশি। আয়ুর্বেদে আমলকিকে ঔষধি গুণে অন্যতম সেরা বলেও মনে করা হয়। তার কারণ আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি। যেখানে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের নিয়মিত ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং এক জন প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার নিয়মিত ৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার, সেখানে একটি সাধারণ মাপের আমলকিতে (যার ওজন ৫০ গ্রামের আশপাশে) ভিটামিন সি থাকে ৩০০-৩৫০ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ শরীরের দৈনিক প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি!
রোজ জরুরি
শরীরে ভিটামিন সি-এর প্রয়োজন পড়ে নিয়মিত। এক দিকে ভিটামিন সি যেমন শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তিবৃদ্ধিতে করে, তেমনই ভিটামিন সি শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যালসের হাত থেকে মুক্ত করে অসুখ বিসুখ হতে দেয় না। আবার ভিটামিন সি মেটাবলিজ়ম বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সাহায্য করে। মুশকিল হল শরীর ভিটামিন সি মজুত করে রাখতে পারে না। যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু নিয়েই বাকিটা রেচন প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে বার করে দেয়। তাই রোজ অন্যান্য খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি খেলে শরীর ভাল থাকবে। কিন্তু তার জন্য আমলকিই খাবেন কেন?
—ফাইল চিত্র।
দৈনিক চাহিদা
একটি ছোট আমলকি খেলেই শরীরের দৈনিক ভিটামিন-সির চাহিদা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। যেখানে অন্য টক ফল, যাতে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে বলে মনে করা হয়, যেমন পাতিলেবু, কমলালেবু ইত্যাদি, তাতে একটি ফলে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ শরীরের দৈনিক চাহিদার থেকে অনেক কম। ১০০ গ্রাম কমলা লেবুতে রয়েছে ৫৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। ১০০ গ্রাম ওজনের পাতিলেবুতেও রয়েছে ৫৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। প্রায় একই পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে মুসাম্বি লেবুতে। আনারসের ১০০ গ্রামে ভিটামিন সি রয়েছে ৪৮ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ কোনওটিই পুরুষের প্রয়োজনের ৯০ মিলিগ্রাম কিংবা মহিলাদের জন্য প্রয়োজনীয় ৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। কিন্তু আমলকি প্রয়োজনের থেকে বেশি ভিটামিন সি দিতে পারছে।
কী ভাবে খেলে ভাল?
দিন কয়েক আগে ইশা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধগুরু আমলাকির গুণ বর্ণনা করে বলেছেন, সকালে খালি পেটে কাঁচা আমলকি চিবিয়ে খাওয়া সবচেয়ে ভাল। যদি আমলকি কষা স্বাদের জন্য খেতে অসুবিধা হয় তবে তাতে সামান্য মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। তাতে উপকার বাড়বে বই কমবে না। যদিও পুষ্টিবিদ ম্যাক সিংহ তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানাচ্ছেন, সকালে আমলকির রস খেলেও আপত্তি নেই। তবে সেই রস কোনও রকম রাসায়নিক এবং প্রিজারভেটিভ বর্জিত হতে হবে। বাজারে অনেক রকমের আমলকির রস বা পাউডার পাওয়া যায়। সে সব খাওয়ার আগেও প্রিজারভেটিভ আছে কি না দেখে নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে ম্যাক জানিয়েছেন, আমলকি সকালে খালিপেটে খাওয়াই সবচেয়ে বেশি উপকারী।
—ফাইল চিত্র।
সুফল পেতে কত দিন?
চুল এবং মাথার ত্বকের চিকিৎসক শ্রব্য তিপিরনেনি জানাচ্ছেন, কোলাজেন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে আমলকি। যে প্রোটিন ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে যেমন সাহায্য করে, তেমনই চুলের গোড়াও শক্ত করে। চুলের ফলিকলে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। কিন্তু এই সমস্ত সুফল আমলকি খাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বোঝা যাবে না। তবে চিকিৎসক শ্রব্য বলছেন, ‘‘আমলকি খাওয়ার সুফল এক-দেড় মাসের মধ্যেই বোঝা যাবে।’’
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কি?
কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভাল নয়। আমলকিও তাই। পুষ্টিবিদ সমীরা আনসারি বলছেন, আমলকি খাওয়া এমনিতে নিরাপদ। অতিরিক্ত খেলে তা হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। এমনকি, অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিডনির সমস্যাও হতে পারে। দিনে দু’টি আমলকি খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে একই সঙ্গে বলেছেন, আমলকি নিয়মিত ওষুধের মতো খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে এক বার পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। কারও অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বা কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে বা কোনও ওষুধ নিয়মিত খেলে তাঁরও চিকিৎসককে জানিয়েই আমলকি খাওয়া শুরু করা উচিত।