চাকুলিয়ায় সভার শেষে পথে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রবিবার। ছবি: মেহেদি হেদায়েতুল্লা।
রাজ্যে বিধানসভা ভোট এখনও তিন বছর বাকি। এখন থেকেই সেই ভোটে দলের ‘লক্ষ্য’ বেঁধে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় রবিবার অভিষেকের দাবি, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে তৃণমূল ২৪০টি আসন পাবে। তাঁর এই দাবি ঘিরে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। অভিষেক ২০২৬ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের হয়ে প্রচার করতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। কটাক্ষ করতে ছাড়েনি কংগ্রেস ও বামেরাও।
উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় এ দিন ‘জনসংযোগ যাত্রা’র জনসভায় যোগ দেন অভিষেক। সেখানে তিনি বিজেপির নাম না করে সুর চড়িয়ে বলেন, “তৃণমূলকে চমকে-ধমকে আটকে রাখা যাবে না। তৃণমূলকে যত চমকেছেন, ধমকেছেন, তৃণমূল তত শক্তিশালী হয়েছে।” এর পরেই ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে কত আসন পেয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ তোলেন অভিষেক। নিজেই বলেন, ‘১৮৪টি’। সেটা বেড়ে ২০১৬ সালে রাজ্যে তৃণমূলের আসন ২১১ ও ২০২১ সালে ২১৪ হয় বলে মন্তব্য করেন অভিষেক। তার পরেই তিনি বলেন, “২০২৬-এ ২৪০ হবে!” প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে ২৯২টি আসনে ভোট হয়েছিল, তার মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ২১৩টি। পরে বাকি দু’টিতে ভোট হয় এবং দু’টিতেই জয়ী হয় শাসক দল।
সম্প্রতি রাজ্যে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, কেন্দ্রে ফের নরেন্দ্র মোদীর সরকার গড়তে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে এ রাজ্যে ৩৫টি আসন পেতে হবে। তা হলে ২০২৫ সালেই তৃণমূলের সরকার পড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছিলেন। শাহের ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূল অভিযোগ করেছিল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়ার ‘ষড়যন্ত্র’ করছেন। সরব হয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক সরাসরি সেই প্রসঙ্গে না গিয়ে নিজের দলের কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন বলেই রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা।
অভিষেকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁর নাম না-করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, “উনি ২০২৬ সাল পর্যন্ত তৃণমূলের হয়ে প্রচার করবেন, নাকি অনুব্রত মণ্ডলের মতো তিহাড়ে থাকবেন, সেটা আগে ঠিক করতে বলুন! এ সব ভুলভাল কথা বলে বাজার গরম করে কোনও লাভ নেই।” পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘গভীর রাতে অমিত শাহের দুঃস্বপ্ন দেখে তাঁর বক্তৃতায় প্রভাবিত হয়ে তিনি (অভিষেক) কিছু বলে থাকতে পারেন। কিন্তু স্বাধীন ভারতে শাহের চেয়ে বড় ভোট-কুশলী জন্মাননি। তাই ২০২৬ সাল পর্যন্ত তৃণমূল দল টিকে গেলেও ২৪০ আসনে এজেন্ট দেওয়ার মতো অবস্থায় থাকবে না!’’
রায়গঞ্জে এসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি বলছে, এ রাজ্যে লোকসভায় ৩৫টি আসন পাবে। তৃণমূল বলছে ৪২টি পাবে। এ বারে খোকাবাবু বলছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ২৪০টি আসন পাবে। এ বার তো দেখছি এ রাজ্যে লোকসভা ও বিধানসভার আসন বাড়াতে হবে!” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘অমিত শাহ বলেছিলেন লোকসভায় ৩৫ আসন পেতে হবে, বিধানসভা নিয়ে কিছু বলেননি। অভিষেকের দাবি, বিধানসভায় ২৪০ আসন পাবেন। দাবিই যখন, ২৯৪ নয় কেন? কিন্তু তিনি লোকসভা নিয়ে চুপ। এটা কি বিজেপি ও তৃণমূলের ‘মেড ফর ইচ আদার’-এর নমুনা? এখন পঞ্চায়েত ভোটের সময়, ওঁরা বিধানসভা-লোকসভা ভাগ করে নিচ্ছেন!’’