সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।—ছবি এএফপি।
অবশেষে বিধানসভায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনছে শাসক তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সোমবার এ কথা জানিয়েছেন। বিরোধী বাম ও কংগ্রেস ‘নীতিগত ভাবে’ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে একই সঙ্গে তারা প্রশ্ন তুলেছে, এই উদ্যোগে এত দেরি কেন? পাশাপাশি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রস্তাব দিয়েছেন, কেরলের মতো বাংলার সরকারও সিএএ-র বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করুক।
মমতা এ দিন শিলিগুড়ি যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে বলেন, ‘‘নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহারের দাবিতে রাজ্য বিধানসভায় আমরা দু’-এক দিনের মধ্যেই প্রস্তাব গ্রহণ করব।’’ বিধানসভা সূত্রের খবর, আগামী ২৭ জানুয়ারি বিধানসভায় ওই প্রস্তাব আসতে পারে। এর আগে বাম শাসিত কেরল বিধানসভায় এই রকম প্রস্তাব পাশ হয়। পরে পঞ্জাবের কংগ্রেস সরকারও একই পথে হাঁটে। সেই পর্বে গত ৯ জানুয়ারি এ রাজ্যে বিধানসভার এক দিনের অধিবেশনে সিএএ বিরোধী প্রস্তাব আলোচনা চেয়েছিল বাম এবং কংগ্রেস। তারা সেই মর্মে একটি প্রস্তাব জমাও দিয়েছিল। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু সে দিন বিধানসভা অধিবেশনে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী সিএএ বিরোধী প্রস্তাব আলোচনার কথা তুলতেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘‘আপনি কে? আপনার কথা কেন শুনব?’’ তিনি অধিবেশনে আরও জানান, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে সকলের আগে প্রস্তাব পাশ করেছে এ রাজ্যের বিধানসভাই।
সেই প্রেক্ষিতে এ দিন বাম, কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, বিধানসভায় ৯ তারিখের অধিবেশনে সিএএ-র বিরুদ্ধে বিরোধীদের দেওয়া প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল কেন? সূর্যবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বিধানসভায় সিএএ, এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা হলে আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাব। মানুষের আন্দোলনের চাপেই এটা করতে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন, আমরা সব আগে করে দিয়েছি। এখন আবার প্রস্তাব আনার কথা বলছেন, কারণ মানুষের প্রতিবাদ জোরালো হচ্ছে।’’ কংগ্রেস-শাসিত পঞ্জাবের বিধানসভায় একই রকম প্রস্তাব পাশ করার পরে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেরল সরকারের দায়ের করা মামলায় শরিক হতে চেয়েছেন। এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সূর্যবাবুর বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কেরলের মামলায় শরিক হতে বললে তো উনি রাগ করবেন। তার চেয়ে উনি বরং রাজ্য সরকারের তরফে আর একটা মামলা করুন। রাজ্যের আপত্তি নথিভুক্ত হয়ে থাক।’’
আরও পড়ুন: এনপিআর ফর্ম নিয়ে ভুল বোঝাচ্ছে কেন্দ্রঃ মমতা
বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানেরও বক্তব্য, ‘‘কথায় বলে, সেই যদি মল খসালি, তবে কেন লোক হাসালি! গত সেপ্টেম্বরে এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রস্তাবও বিধানসভায় গৃহীত হয়েছিল আমাদের চাপাচাপিতে। এর পরে ৯ জানুয়ারি যখন আমরা কেরলের মতো প্রস্তাব জমা দিলাম, আলোচনা চাইলাম, তখন বলা হল আপনাদের কথা কেন শুনব? আসলে এখন মানুষের মনোভাব বুঝতে পারছেন, তাই শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীকে প্রস্তাবের কথা বলতে হচ্ছে।’’
তবে বিজেপি মনে করে, কোনও রাজ্যের বিধানসভাতেই দেশের আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা বিধিসম্মত নয়। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘একটা আইন যখন পাশ হয়েছে, তখন তা দেশের আইন। সেটা মানব না, এই মর্মে কোনও রাজ্যের বিধানসভাতেই প্রস্তাব নেওয়া অসাংবিধানিক।’’