প্রতীকী ছবি।
দলীয় নির্দেশ অমান্য করে নির্দল প্রার্থী হিসেবে পঞ্চায়েত ভোটে লড়লে বা সেই প্রার্থীদের সমর্থনে কাজ করলে যে কড়া পদক্ষেপ করা হবে, তা আগেই জানিয়েছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু সেই সতর্কবার্তায় কাজ না হওয়ায় এ বার জেলায় জেলায় বিক্ষুব্ধদের কোথাও সাসপেন্ড, আবার কোথাও বহিষ্কারের পথে হাঁটছে শাসকদল। দল বিরোধিতার অভিযোগে হুগলিতে ২৭ জন নেতা-কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ৪০ জন সাসপেন্ড হয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে একসঙ্গে এত জন কর্মী সাসপেন্ড হওয়ায় ভোটে বেশ কিছু জায়গায় তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। কটাক্ষ করেছে বিরোধীরাও। তবে তাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।
দল-বিরোধী কাজকর্ম ও ‘গোঁজ’ প্রার্থীদের নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তৃণমূল। দলের পদে থেকেও নির্দল ও অন্য দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অভিযোগে ২৭ জনকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেছে হুগলির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি রামেন্দু সিংহরায়। সাসপেন্ড হওয়া নেতাদের মধ্যে কেউ আরামবাগ, কেউ আবার তারকেশ্বর ব্লকের। তালিকায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের অঞ্চল সভাপতি থেকে বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধানের নামও রয়েছে। রামেন্দু জানান, সাসপেনশনের সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই সাসপেন্ড করা হয়েছে। এঁরা ভোটে জিতলেও দলে ফেরানো হবে না।’’ এ নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রায় দশ হাজার নির্দল প্রার্থী আছে। ভাবমূর্তি ফেরাতে চাইলে সকলকে বহিষ্কার করা উচিত। ঠগ বাছতে তো গাঁ উজাড় হয়ে যাবে! তৃণমূলের প্রতি মানুষের ঘেন্না এসে গিয়েছে। ভোট দেবার সুযোগ পেলেই বদলে দেবে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরেও যে ৪০ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার ১৩ জন এবং মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার ২৭ জন রয়েছেন। দলীয় সূত্রে খবর, যাঁরা সাসপেন্ড হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ নির্দল প্রার্থী হয়েছেন, কেউ আবার নির্দল প্রার্থীর হয়ে প্রচার করছেন। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘দলীয় নির্দেশ মেনে চলতে বলা হয়েছিল ব্লক স্তরের নেতাদের। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাঁরা দলের বিরুদ্ধে গিয়েছে, এমন ২৭ জনকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ পাওয়ার পরেই এ কথা জানানো হল।’’ পাশাপাশিই, কেশিয়ারী ব্লকে ৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বুথ সহ-সভাপতি দু’জন রয়েছেন, চার জন ব্লক কমিটির সদস্য।
পঞ্চায়েত ভোটে ‘গোঁজ’ প্রার্থী নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বার বার সতর্ক করার পরেও বিক্ষুব্ধদের নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে শাসকদল। কিছু জায়গায় তাঁদের নিরস্ত করা গেলেও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবারই বীরভূম, হুগলি, হাওড়া, ঝাড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর মিলিয়ে ১৮৯ জনকে সাসপেন্ড করা হয়। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ স্পষ্ট বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে শীর্ষ নেতৃত্বের মনোভাব কঠোর। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনও রকম কাজই মেনে নেওয়া হবে না।’’