পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে সোমবার প্রশাসনিক সভায় বক্তৃতা করেন মমতা। ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবার হনুমান জয়ন্তী। সেই উৎসব ঘিরে যাতে রাজ্যের কোথাও যাতে অশান্তির পরিবেশ তৈরি না হয় তার জন্য আগাম সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গেরুয়া শিবিরের রামনবমী কর্মসূচি ঘিরে রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় অনভিপ্রেত অশান্তি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই আগামী বৃহস্পতিবারের জন্য সাবধানবাণী শুনিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আগেই জানিয়েছিল যে, রামনবমীতে শুরু করে হনুমান জয়ন্তী পর্যন্ত চলবে টানা কর্মসূচি। এ ছাড়াও রাজ্যের অনেক জায়গায় ওই দিন বজরঙ্গবলীর পুজো এবং শোভাযাত্রা হয়। তা নিয়ে যাতে গোলমালের পরিবেশ তৈরি না হয় সে জন্য শুধু প্রশাসনকে আগাম সতর্ক করাই নয়, সর্বস্তরের মানুষকেও এগিয়ে আসার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে সোমবার প্রশাসনিক সভায় বক্তৃতা করেন মমতা। সেখানেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, রামনবমী মিটে গেলেও গেরুয়া শিবির কেন মিছিল করে চলেছে। প্রসঙ্গত, দলের তরফে মিছিল না হলেও অন্য সংগঠনের কর্মসূচিতে বিজেপি নেতা, কর্মীরা যোগ দেবেন বলে আগেই ঘোষণা করেছিল গেরুয়া শিবির। রবিবার তেমনই একটি মিছিলে যোগ দেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই মিছিল ঘিরেও অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয় হুগলির রিষড়ায়। তার পরের দিনই মমতা হনুমান জয়ন্তী নিয়ে আগাম সতর্কবাণী শুনিয়ে রাখেন। খেজুরিতে বলেন, ‘‘প্রশাসনকে ৬ তারিখ নিয়েও সতর্ক করব। আমাদের ছেলেমেয়েদেরও বলব। আমরা সবাই বজরঙ্গবলীকে সম্মান করি। কিন্তু ওরা যেন আবার অশান্তি করার ছক না কষতে পারে।’’
সেখানেই মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘রামনবমীর মিছিল ৫ দিন হবে কেন? রামনবমীর দিন মিছিল করলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বন্দুক নিয়ে মিছিল চলবে না।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অনুমতি ছাড়াই মিছিল করছে। এত রাস্তা থাকা সত্ত্বেও ঢুকে যাচ্ছে সংখ্যালঘু এলাকায়। রমজান মাসে ফল খাওয়া হয়। সেই ফলের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। বন্দুক নিয়ে নাচ করছে।’’
এর পরেই সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার কথা বলেন। আলাদা করে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছে আর্জি জানান। মমতা বলেন, ‘‘ধর্ম যার যার নিজের। উৎসব সবার। আনন্দ করুন। ৬ তারিখটার জন্য আমি হিন্দু ভাইবোনেদের দায়িত্ব দিয়ে রাখব। রমজান চলছে। মুসলিম ভাইবোনেদের উপরে যাতে কোনও অত্যাচার না হয় তার জন্য হিন্দু ভাইবোনেরা গ্রামে গ্রামে, জেলায় জেলায় ওদের রক্ষা করবেন। ওদের ভাল করে রক্ষা করবেন, ওরা সংখ্যালঘু। ওরা যেন আমাদের থেকে বিচার পায়। কোনও তফসিলির গায়ে যেন হাত না পড়ে, কোনও আদিবাসীর গায়ে, ছাত্রছাত্রীর গায়ে যেন হাত না পড়ে। আমি যুবসমাজকে বলব, এগিয়ে আসুন। ছাত্র যুবদের মধ্য দিয়ে গান্ধীজিকে, মাতঙ্গিনীকে, বিদ্যাসাগরকে দেখতে পাই।’’ একই সঙ্গে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে মমতা প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা পারবেন না গুন্ডাবাজদের রুখতে? কি কন্যাশ্রী, পারবেন না রুখতে?’’ এর পরেই বলেন, ‘‘আমার কন্যাশ্রী যদি আমার পাশে থাকে, আমি দাঙ্গাবাজদের লড়ে রুখে দেখিয়ে দেব।’’ কন্যাশ্রীর পাশাপাশি সবুজসাথী, শিক্ষাশ্রী, মেধাশ্রী, কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের উদ্দেশেও অশান্তি রুখতে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দেন।