মমতা বুঝিয়ে দেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের হারে ডিএ-র দাবি তিনি সমর্থন করেন না। ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র দাবির জবাবে এত দিন চড়া সুর শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। তবে মঙ্গলবার অন্য স্বর শোনা গেল। তিনি বললেন, ‘‘আমি যদি ভালবেসে দিই, নিশ্চয়ই দেব।’’
রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ক’দিন আগেই কর্মবিরতি এবং গত শুক্রবার ধর্মঘট পালন করেছে। সুপ্রিম কোর্টে বকেয়া ডিএ নিয়ে চলছে মামলাও। শুনানি আগামী ২১ মার্চ। তার মধ্যে মমতার মঙ্গলবারের বক্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। তবে কি মুখ্যমন্ত্রী এটাই বুঝিয়ে দিলেন যে, দিতে হলে তিনি নিজের ইচ্ছায় দেবেন, কারও চাপে নয়?
মঙ্গলবার আলিপুর জেলা আদালতের একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই ডিএ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আমরা তো আইনজীবীদের উপর নির্ভর করি। বিচারপতিদের রায়কে সম্মান জানাই। আমি অধিকার কাড়ার পক্ষে নই। আমি অধিকার দেওয়ার পক্ষে। যেটা আইনত স্বীকৃত, সেই অধিকার।’’ প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার একটা সময় পর্যন্ত ডিএ সরকারি কর্মচারীদের ‘অধিকার নয়’ বলে সওয়াল করেছিল। সেখান থেকে মঙ্গলবার মমতার স্বরের স্পষ্ট দূরত্ব অনেকটা।
ডিএ প্রসঙ্গে মমতা টেনেছেন বাম আমলের কথাও। তিনি বলেন, ‘‘যখন বিরোধী ছিলাম, তখন দেখতাম শিক্ষকেরা মাসের এক তারিখে মাইনে পান না। কখনও তিন মাস-ছ’মাস মাইনে হত না। অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর অবস্থাও তা-ই। সময় মতো পেনশন হত না। আজ গর্ব করে বলতে পারি, এত ধার করে রেখে যাওয়া সত্ত্বেও আমরা মাসের এক তারিখে মাইনে দিই। পেনশনটাও দিই। এই মানবিক সরকারকে নিয়ে এত ভাববেন না।’’
এর পরেই মমতা বুঝিয়ে দেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের হারে ডিএ-র দাবি তিনি সমর্থন করেন না। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ষষ্ঠ পে কমিশন অনুযায়ী টাকা দিয়েছি। কিন্তু আপনারা কাজ করবেন রাজ্য সরকারের হয়ে, আর বলবেন কেন্দ্রীয় সরকারের হারে ডিএ দিতে, এটা তো হয় না।’’ সেই প্রসঙ্গ ধরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আলাদা বেতন পান। রাজ্যের স্কুলের শিক্ষকরা আলাদা বেতন পান। কেন্দ্র এবং রাজ্যের পরিকাঠামো আলাদা। আমি যদি ভালবেসে দিই, নিশ্চয়ই দেব। ২০১৯ সালের পে কমিশনে পুরোটাই দিয়েছি। কিন্তু এক দিকে এতগুলো প্রকল্প চলছে, অন্য দিকে আর কত করতে পারে একটা সরকার!’’
এমন ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প চালিয়ে যে বর্ধিত ডিএ দেওয়া সম্ভব নয় তা আগেও বলেছেন মমতা। তবে সেই বক্তব্য মঙ্গলবারের মতো ছিল না। রাজ্য বাজেট পেশের দিনই ৩ শতাংশ হারে ডিএ ঘোষণা করে সরকার। বলা হয়, মার্চ মাসের বেতন থেকে তা মিলবে। এর পরেও আন্দোলন চলায় মমতা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বলেছিলেন, ‘‘আমরা তো ম্যাজিশিয়ান নই। টাকাটাও জোগাড় করতে হবে। অনেকে বলে, এটা পেলাম, ওটা দাও, এটা পেলাম, ওটা দাও। আরে যেটা পেলে সেটাকে ধরে রাখতে গেলে যে টাকার প্রয়োজন সেটা কোথা থেকে জোগাড় হবে? কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না। বঞ্চনা করছে আর মিথ্যা কথা বলছে।’’
এর পরে গত ৬ মার্চ মমতা বিধানসভাতেও ডিএ নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। সে দিন বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো আলাদা রাজ্যের থেকে। আর কেন্দ্রের সরকার কত দিন ছুটি দেয়? আমরা দুর্গাপুজোয় দশ দিন ছুটি দিই। ছট পুজোয় ছুটি দিই।’’ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বাম আমলের প্রসঙ্গও টেনেছেন। বলেন, ‘‘সিপিএম আমলের ডিএ বাকি ছিল। ৩৪ বছরে পুরো ডিএ দেয়নি। ৯৯ শতাংশ ও ৬ শতাংশ মিলিয়ে আমরা ১০৫ শতাংশ ডিএ দিয়েছি।’’
এ সব এখন অতীত। মঙ্গলবার তিনি ভালবেসে দেওয়ার কথা বলতেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নতুন প্রশ্ন, তবে কি সত্যিই মুখ্যমন্ত্রীর ভালবাসা অচিরেই মিলতে পারে!