শুক্রবার কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঘোষণা করেছেন, তাতে সেই জল্পনা শুরু হয়েছে। — নিজস্ব চিত্র।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলীয় সংগঠনে ‘পর্যবেক্ষক’ পদটি তুলে দিয়েছিল তৃণমূল। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে কি সেই পুরনো পদ্ধতিতেই ফিরে যাচ্ছে বাংলার শাসকদল? শুক্রবার কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঘোষণা করেছেন, তাতে সেই জল্পনা শুরু হয়েছে। দলের সর্বময় নেত্রী হিসেবে মমতা বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব বিভিন্ন নেতার মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্ট নেতাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘পর্যবেক্ষক’ বলা হচ্ছএ না। বৈঠকের পরে দলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পর্যবেক্ষক পদ ফিরছে বলা যাবে না। দলনেত্রী কে কোন জেলার সংগঠন দেখবেন, সেটা ঘোষণা করে দিয়েছেন।’’
বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) সহায়তা নিয়েছিল তৃণমূল। অনেকের ধারণা, পিকের পরামর্শেই পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালের ২৩ জুলাই সেই ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। সেই সময় দলেও ব্যাপক রদবদল হয়েছিল। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ— প্রায় সব জেলাতেই পরিবর্তন আসে। নতুন করে সাজানো হয় যুব সংগঠনও। সেই সঙ্গে পর্যবেক্ষকের পরিবর্তে জেলায় জেলায় ‘চেয়ারম্যান’ পদ তৈরি করা হয়।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এখন আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো না করা হলেও অতীতের সেই ‘পর্যবেক্ষক’ ব্যবস্থাই ফিরে এল বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবারের ঘোষণামতো এখন থেকে অরূপ বিশ্বাস দার্জিলিং এবং পূর্ব বর্ধমানের পাশাপাশিই নদিয়া জেলারও সংগঠন দেখবেন। নদিয়ায় দলীয় সংগঠন দুর্বল হচ্ছে জানিয়ে জেলানেতৃত্বকে সতর্কও করেন মমতা। প্রসহ্গত, নদিয়া নিয়ে বরাবরই তৃণমূলের উদ্বেগ রয়েছে। আগেও সাংগঠনিক বৈঠক এবং প্রশাসনিক সভায় ওই জেলা নিয়ে চিন্তার সুর ধরা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীর কণ্ঠে।
অতীতে ফিরহাদ হাকিম দেখতেন হাওড়া এবং হুগলি জেলা। তিনি সেই দায়িত্ব ফিরে পেলেন। তাপস রায় দেখবেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। মলয় ঘটকের হাতে গেল বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া। আগেই মমতা ঘোষণা করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে থাকায় তিনি নিজেই বীরভূম জেলার সংগঠন দেখবেন। নতুন ঘোষণাতেও সেটাই বজায় থাকছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। উত্তর দিনাজপুরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আরেক মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে। বাকি জেলার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ও সভাপতিরাই সংগঠন দেখবেন বলে শুক্রবারের বৈঠকে জানিয়েছেন মমতা।
বৈঠকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, প্রতি শুক্রবার তিনি জেলাভিত্তিক বৈঠক করবেন। এক একদিনে তিনটি করে জেলা নিয়ে তিনি নিজে বসবেন। যা থেকে স্পষ্ট যে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য জুড়ে দলীয় সংগঠনের রাশ নিজের হাতে নিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নতুন সভাপতি করা হয়েছে যুবনেতা মোশারফ হোসেনকে। বৈঠকে মমতা দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকেও অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন। নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আনার জন্য ছাত্রযুব প্রশিক্ষণ চালুর নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, দলের নেতাদের বেশি করে দলীয় টুইটগুলি ‘রিটুইট’ করতে হবে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, অতীন ঘোষ, পরেশ পাল এবং মালা রায় বেশি রিটুইট না করায় অনুযোগ প্রকাশ করেছেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রী।