রাহুল আসলে মোদীরই সুবিধা করে দিচ্ছেন বলে মনে করছে তৃণমূল। ফাইল চিত্র।
লোকসভায় বিজেপির সাংসদরা যাঁর বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন গত কয়েক দিন ধরে, সেই রাহুল গান্ধীকে আসলে বিরোধী শিবিরের মুখ বানাতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর দল। এমনটাই দাবি করছে তৃণমূল। তৃণমূলের মতে, তাতেই দেশের শাসকদলের সবচেয়ে বেশি সুবিধা। শুক্রবার কালীঘাটে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে বৈঠকে বসেছিলেন দলের শীর্ষনেতৃত্ব ছাড়া জেলাস্তরের নেতারাও। পঞ্চায়েত ভোট সামনে এগিয়ে এলেও, তার পরে পরেই বেজে উঠবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দামামা। তার আগে নিজেদের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল বলে দাবি করে তৃণমূল শুক্রবার জানিয়েছে, তাদের লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে হলেও কংগ্রেসের সঙ্গেও দূরত্ব বজায় রেখে চলবে তারা। লোকসভা ভোটে বিরোধীদের নিয়ে তৃণমূলের ভিন্ন পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়ে, কিছুটা মমতার বলা মন্তব্যের জের টেনেই দলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কংগ্রেস যেন একেবারেই না-ভাবে যে ওরাই বিরোধীদের বিগ বস।’’
কেন্দ্রীয় স্তরে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বিভিন্ন বিরোধী দলকে নিয়ে বৈঠক করেছে কংগ্রেস। তৃণমূল-সহ একাধিক বিরোধী দল অবশ্য কংগ্রেসের নেতৃত্বে যৌথ কর্মসূচি বা বৈঠক মূলত এড়িয়েই থাকছেন। শুক্রবারের বৈঠকের পরও তৃণমূল স্পষ্ট বুঝিয়ে দিল, তারা এখনই বিরোধীদের মুখ ঠিক করতে চাইছে না। কালীঘাটের সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বলেন, ‘‘এ রাজ্যে কংগ্রেস এবং বিজেপি হাত মিলিয়ে চলছে। কেন্দ্রেও বিজেপি চাইছে রাহুলই বিরোধী শিবিরের মুখ হোন। কারণ তাতে নরেন্দ্র মোদীর জিততে সুবিধা হবে। কিন্তু তৃণমূলও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল। তৃণমূল এটা প্রমাণ করবে কী ভাবে বিরোধীদের একত্র করতে হয়।’’
শুক্রবার কালীঘাটে মমতার বাড়িতে বৈঠকের পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সুদীপ। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বৈঠকে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি জানিয়েই, তাঁরা কংগ্রেসের প্রসঙ্গ তোলেন। সুদীপ বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস একলা চলার ক্ষমতা রাখে।’’ একই সঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে চলার কথাও বলেছে তৃণমূল। সুদীপ জানিয়েছেন, আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে তৃণমূলের কথাবার্তা চলছে। শুক্রবারই সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব কলকাতায় দলীয় কর্মসূচির ফাঁকে মমতার বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন। কলকাতায় আসার আগে অখিলেশও তৃণমূলের সুরেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর দল তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে উৎসাহী। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনের আগে কোনও ধরনের জোট তাঁরা করবেন না।
আগামী ২৩ মার্চ ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজু জনতা দল প্রধান নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন মমতা। তার পর যাবেন দিল্লিতে। এমনকি, আগামী দিনে মহারাষ্ট্র থেকেও বিরোধীরা কথা বলতে আসবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সুদীপ। তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ছাড়াও এনডিএ জোটে থাকা ১৫টি পার্টি বিজেপিকে ছেড়ে এখন কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তৃণমূল তাদেরকেও সঙ্ঘবদ্ধ করে ২০২৪ সালে ভোটে লড়ার কথা ভাবছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গেও জোট বাঁধার কথা ভাবছে তৃণমূল।’’