রবিবার ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। ছবি: ফেসবুক।
রবিবার ধর্মতলায় শহিদ দিবসের সমাবেশের শেষ লগ্নে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘‘আমাদের শহিদ সমাবেশ সম্পন্ন হল।’’ বস্তুত, শুধু তৃণমূলের বার্ষিক শহিদ সমাবেশই সম্পন্ন হল না, পরীক্ষা শেষ হল তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীরও। সমাবেশের ভিড় তো বটেই, আপাদমস্তক ‘রাজনৈতিক’ চেহারা বলছে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাতায় ‘পাশ মার্ক’ পেয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের ‘বক্সীদা’।
লোকসভা ভোটের পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠন থেকে ‘ছোট বিরতি’ নিয়েছিলেন চিকিৎসার কারণে। তাই তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নামে আয়োজিত ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ আয়োজনের দায়িত্ব মমতা দিয়েছিলেন বক্সীর উপরেই। গত প্রায় এক মাস ধরে এই সভা সফল করতে দিনরাত পরিশ্রম করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। রবিবার সমাবেশের শেষে তাই খানিক তৃপ্ত দেখিয়েছে এই বর্ষীয়ান রাজনীতিককে। এমনিতে পশ্চিমবঙ্গ যুব তৃণমূলের তরফেই এই সভার আয়োজন করা হয়। গত কয়েক বছরে যুব সংগঠনের সঙ্গে অভিভাবকের মতো ওই সমাবেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকতেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক।
অভিষেক চিকিৎসার কারণে সংগঠনের কাজকর্ম থেকে বিরতি নেওয়ায় সমাবেশের দায়িত্ব পেয়েই বক্সী প্রস্তুতি শুরু করে দেন রাজ্য স্তরে। কখনও বাইপাসের ধারে তৃণমূল ভবন, কখনও ভবানীপুরে তাঁর প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের পার্টি অফিসে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নিয়ে বৈঠক শুরু করেন। পাশাপাশি, জেলার নেতাদের কলকাতায় ডেকে পাঠিয়ে দায়িত্বও বুঝিয়ে দেন। রাজ্য সভাপতি হিসেবে চিঠি পাঠান দলের সমস্ত জেলা সভাপতি ও চেয়ারম্যানকেও। বক্সীর চিঠিতে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অরূপ বিশ্বাস এবং সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের নাম ও ফোন নম্বর দেওয়া ছিল। সঙ্গে নির্দেশ ছিল, সমাবেশ আয়োজনের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার। বক্সীর চিঠিতে বলা হয়েছিল, প্রতিটি ব্লকে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা করতে এবং ওই দিন যাতে ধর্মতলায় ‘রেকর্ড জমায়েত’ হয়, তা সুনিশ্চিত করতে। জেলাভিত্তিক নেতাদের দায়িত্ব বণ্টনের পরে শহিদ সমাবেশের মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরুর খুঁটিপুজোতেও হাজির তৃণমূলের ‘বক্সীদা’। তবে তৃণমূলের প্রবীণ নেতারা জানাচ্ছেন, প্রতি বারই বক্সী খুঁটিপুজোর সময় হাজির থাকেন। এ বারও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পাশাপাশিই ওই নেতা বলেছেন, ‘‘গত কয়েক বছরে সমাবেশ আয়োজনে বক্সীদাকে এতটা সক্রিয় থাকতে দেখিনি।’’
বক্সীর সঙ্গে সমাবেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘বক্সীদার নেতৃত্বে আমরা সকলে কাজ করেছি। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের জন্য আমাদের একটি নির্দিষ্ট ব্লুপ্রিন্ট আগে থেকেই রয়েছে। সেই ব্লুপ্রিন্ট দেখে সমাবেশকে এ বার কী ভাবে আরও উন্নত করা যায়, সেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়েছিলাম। সেই লক্ষ্যে আমরা সফল।’’ জয়প্রকাশ আরও বলেন, ‘‘একটি জনবহুল এলাকায় রাজনৈতিক সমাবেশ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। কিন্তু সভাপতি সমাবেশ শেষ হয়েছে বলে ঘোষণার পর যেভাবে নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা শৃঙ্খলা দেখিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে ফিরে গিয়েছেন, এটাই আমাদের কাছে এই সমাবেশের বড় প্রাপ্তি।’’
ধর্মতলার মঞ্চ বাঁধার কাজের দেখভাল করা থেকে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক ও কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে দূরদূরান্ত থেকে আগত জেলার কর্মীদের থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, তা-ও দু’বেলা নিজেই একাধিক ব্যক্তিকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন রাজ্য সভাপতি। কোথাও কোনও ত্রুটিবিচ্যুতির কথা কানে এলে, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকে ফোনে ধমক দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন কড়া মেজাজের বক্সী। এমনিতে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘অম্ল-মধুর’ সম্পর্ক বক্সীর। কিন্তু শনিবার রাতে সমাবেশে সংবাদমাধ্যমের মঞ্চ তৈরির দায়িত্বে থাকা এক কর্মীকে ফোন করে সুব্রত জানতে চান, ‘‘মিডিয়ার জন্য ওয়াইফাইয়ের বন্দোবস্ত কি হয়ে গিয়েছে?’’ জবাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি জানান, ‘‘হ্যাঁ দাদা।’’ আর রবিবার সকাল থেকেই মঞ্চের হাজির হয়েছিলেন বক্সী। শেষ মূহূর্তের প্রস্তুতি দেখার পাশাপাশি, পুলিশ-প্রশাসন ও নেতাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রেখে সব মিছিলকে ধর্মতলামুখী করার নির্দেশ দিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। প্রত্যাশিত ভাবেই প্রতি বছরের মতো তাঁকেই সভায় সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব দিয়েছিল দল। সেই দায়িত্ব নিয়ে মাইক্রোফোন হাতে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতাও করেছেন বক্সী। আবার বক্তৃতা শেষ করেই সভা পরিচালনার দায়িত্ব পিছন থেকেই সামলেছেন। শেষে নিজেই সভা সম্পন্ন হওয়ার ঘোষণা করে সমাবেশ শেষ করেছেন তিনিই।