প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিধানসভা ভোটের সময়ে যারা একটি দফাও কমানোর পক্ষে সায় দেয়নি, সেই বিজেপিই এখন উপনির্বাচনের দাবি মোকাবিলায় করোনার যুক্তি সামনে আনছে। করোনার টিকাকরণের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার আগে দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের বকেয়া ভোট এবং আরও পাঁচটি কেন্দ্রের উপনির্বাচন চায় না তারা। ওই ৭ কেন্দ্রের ভোট-প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে শাসক দল তৃণমূল সক্রিয় হওয়ার পর থেকেই নানা ভাবে তাতে আপত্তি তুলছে প্রধান বিরোধী দল। এ বার বিজেপির ওই অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের কটাক্ষ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপনির্বাচনে জয় আটকানোর জন্যই করোনাকে ঢাল করতে চাইছে বিজেপি।
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই রাজ্যে ৮ দফায় বিধানসভা ভোট করানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল। ভোট-পর্ব এবং প্রচার চলাকালীন কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় শেষ দিকের কয়েকটি দফা কমিয়ে একসঙ্গে করার দাবিতে তৃণমূলের সঙ্গেই সরব ছিল অন্য বিরোধী দল সিপিএম ও কংগ্রেস। কিন্তু বিজেপি তখন ওই দাবিতে কর্ণপাত করেনি, বরং উল্টো কথাই বলেছিল। তৃণমূলের মতে, তখন রাজ্যে ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে অতিমারির সঙ্কটকে অগ্রাহ্য করেছিল বিজেপি। ভোটে হেরে যাওয়ার পরে এখন রাজ্যের ‘বাস্তবতা’ বুঝে উপনির্বাচন আটকাতে নিজেদের সুবিধামতো তারা অবস্থান বদল করছে বলেই তৃণমূলের অভিযোগ।
শুভেন্দু অবশ্য তৃণমূলের কোর্টেই বল রাখতে চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সকলের টিকাকরণের কাজ শেষ হওয়ার আগে উপনির্বাচনের দাবি তোলা উচিত নয় তৃণমূলের। বিধানসভা ভোটের সময়ে মাদ্রাজ হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে উৎসাহিত হয়েছিল তৃণমূল। সেই পর্যবেক্ষণ এখনও মাথায় রাখা উচিত!’’ কিন্তু তাঁরা তো সে সময়ে এই নিয়ে মাথা ঘামাননি? শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলই তো বলেছিল, বাইরে থেকে বিজেপির নেতা-নেত্রী আর আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানেরা এসে নাকি করোনা ছড়িয়ে গিয়েছেন! তা হলে এখন উপনির্বাচনের কথা আসছে কেন? টিকাকরণের পরেই উপনির্বাচনের কথা বলা উচিত।’’ বিধানসভায় এসে শুক্রবার বিরোধী দলনেতা প্রশ্ন তুলেছেন, রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিকতম নির্দেশিকা অনুযায়ী, এখনও করোনার জন্য নিয়ন্ত্রণ বিধি জারি আছে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করা যাবে না। তা হলে ভোটের প্রচারই বা হবে কী করে?
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, ‘‘করোনাকে ঢাল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওরা আটকাতে চাইছে। কিন্তু বেল পাকলে কাকের কী! মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী চেয়ে ২১৩ আসনে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে মানুষ। তাই ভোট হোক বা না হোক, মমতার সরকারই থাকবে।’’
নিয়ম অনুযায়ী, বিধানসভার শূন্য আসনে ৬ মাসের মধ্যে ভোট করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী ৬ মাসের মধ্যে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে না এলে অন্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তাঁরা কি আসলে মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই সঙ্কট তৈরি করতে চান? শুভেন্দুর মত, ‘‘সঙ্কটের কিছু নেই। ওঁদের অনেক নির্বাচিত বিধায়ক আছেন। তাঁদের মধ্যে কাউকে (মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে) বেছে নেওয়া যেতে পারে।’’ বিরোধী দলনেতা উল্লেখ করেছেন, উত্তরাখণ্ডে বিজেপি অ-বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে কিছু দিন আগেই এক জন বিধায়ককে মুখ্যমন্ত্রী করেছে।