নারায়ণ গোস্বামী। —ফাইল চিত্র।
দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্নে বুধবার জোড়া পদক্ষেপ করল তৃণমূল কংগ্রেস। বিধায়ক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামীর নিন্দার পাশাপাশি শিক্ষা বিষয়ক শাখা সংগঠনে ব্যাপক রদলবদলের কথাও ঘোষণা করেছেন শাসক দলের নেতৃত্ব। সেই সূ্ত্রেই চর্চায় ফিরেছে দলের অন্দরে সক্রিয় দুই শিবিরের দ্বন্দ্বও।
শৃঙ্খলা ও অনুশাসন নিয়ে নাড়াচাড়ার মধ্যেই এ দিন নারায়ণের বিরুদ্ধে শাস্তির ইঙ্গিত দিয়েছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, অশোকনগরের বিধায়ক তথা জেলার সভাধিপতি নারায়ণের বিরুদ্ধে অভিযোগ, একটি অনুষ্ঠান-মঞ্চে শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়েছেন তিনি। সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো-ক্লিপ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই বিষয়টি দলের নজরে আসে। সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, মাইক হাতে গান গাইতে উঠে কিছু আপত্তিকর কথাবার্তা বলছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, অনেকের মত, তাঁর আচরণ ছিল ‘অপ্রকৃতিস্থ’। সেই ঘটনার জেরেই এ দিন দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘নারায়ণ একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে যে অসৌজন্যমূলক উক্তি এবং আচরণ করেছেন, দল কোনও ভাবে তা অনুমোদন করে না। বিধানসভার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি বিষয়টি দেখবে।’’ বিধায়কদের জন্য গঠিত ওই কমিটির সঙ্গেও এই ব্যাপারে দলীয় নেতৃত্বের কথা হয়েছে।
অন্য দিকে, এ দিনই শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত শাখা সংগঠনগুলিতে আমূল বদল করেছেন শিক্ষামন্ত্রী তথা দলের শিক্ষা সেলের সভাপতি ব্রাত্য বসু। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের সেই রদবদল সরাসরি সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন ব্রাত্য। শিক্ষা সংক্রান্ত ২৩টি জেলা সংগঠনে সভাপতি ও অন্যান্য পদে নতুন মুখ এনেছেন তিনি। তার পরেই কমিটিতে জায়গা না-পাওয়া অংশের প্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, তাঁরা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অনুগামী’ বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রদবদলে অপসারিত প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি মইদুল ইসলামের দাবি, ‘‘আমরা অভিষেকের কথা প্রচার করি। তাঁর পথে কাজ করি। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’ তাঁর অভিযোগ, এই কারণে শিক্ষামন্ত্রী তাঁকে বারবার ‘হুমকি’ও দিয়েছেন। জেলা স্তরে একই অভিযোগে মুখ খুলেছেন বাদ পড়া নেতা-নেত্রীরা। তবে রদবদলের কথা জানিয়ে ব্রাত্যের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিধায়ক নারায়ণের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও তাঁর ক্ষেত্রে দলের পদক্ষেপ নিয়েও শিবির-চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলে তিনি অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবেই পরিচিত। সেই বিন্যাসেই নারায়ণ সম্পর্কে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনোভাব নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। দলের এই অবস্থান সম্পর্কে মত জানতে নারায়ণের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তা করা যায়নি। প্রসঙ্গত, সদ্য জামিনে মুক্ত প্রাক্তন মন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে জয়প্রকাশ বলেছেন, ‘‘এটুকুই বলব, জ্যোতিপ্রিয় পুরনো, প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা।’’ নারায়ণ ও জ্যোতিপ্রিয় সম্পর্কে দলের এই অবস্থানই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।