কর্মিসভায় বাগযুদ্ধে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) ও আচ্ছেলাল যাদব। —নিজস্ব চিত্র
কর্মী সম্মেলনের ভরা মঞ্চেই পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ালেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কানাইপুর পঞ্চায়েতের প্রধান আচ্ছেলাল যাদবের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি, হুমকি চলতে থাকে। কল্যাণের অভিযোগ, বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে আচ্ছেলালের। পঞ্চায়েত প্রধান পাল্টা বলেছেন, দলকে শেষ করার চক্রান্ত করছেন কল্যাণ।
রবিবার কোন্নগরে তৃণমূলের কর্মিসভায় যোগ দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে বক্তব্যের মধ্যেই কানাইপুরের প্রসঙ্গ আসে। আচ্ছেলালকে উদ্দেশ্য করে কল্যাণ বলেন, ‘‘কানাইপুরে শুধু তুমি জিতবে, আর সাংসদ, বিধায়ক হারবে, এটা হবে না। লোকসভা ভোটে হেরেছি। এ বার ৪ হাজার ভোটে জেতাতে হবে।’’
লোকসভা ভোটে কানাইপুর অঞ্চলে বিজেপি বেশি ভোট পেয়েছিল, তৃণমূল ছিল দু’নম্বরে। সে কথাই বোঝাতে চেয়েছেন কল্যাণ। কিন্তু তার জবাবে আচ্ছেলালও দর্শকাসনে দাঁড়িয়ে পাল্টা তর্ক জুড়ে দেন। বলেন, ‘‘যাঁদের দ্বায়িত্ব দিয়েছেন তাঁদের বলুন।’’ কল্যাণের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘তুমিও তো আছ কানাইপুরে। আচ্ছেলাল এর পর সরাসরি দল ছেড়ে দেওয়ার কথা পর্যন্ত বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বলুন না আজকেই ছেড়ে দিচ্ছি।’’
এর পর শুর হয় আরও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। কল্যাণ সরাসরি আচ্ছেলালকে হুমকির সুরে বলেন, ‘‘তুমি অনেক রঙবাজি করেছ। একদম চোখ রাঙাবে না। থাকতে হলে থাকবে না হলে ছেড়ে চলে যাবে।’’ ছাড়বার পাত্র নন আচ্ছেলালও। তিনি বলেন, ‘‘আপনি ডেকে এনে অপমান করছেন।’’
ঘটনাচক্রে আচ্ছেলাল তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের ভাই। আর এই তর্কাতর্কি যখন চলছে, তখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে দিলীপ। এ ভাবে বেশ কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডার পর আচ্ছেলাল তাঁর অনুগামীদের নিয়ে সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে যান। কোন্নগর রবীন্দ্রভবনের সামনে বসে ছিলেন দীর্ঘক্ষণ। সভার নির্ধারিত সময়ের পর তাঁরা এলাকা ছাড়েন।
পরে সংবাদ মাধ্যমে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে আচ্ছেলাল বলেন, ‘‘কল্যাণ দায়িত্ব নিয়ে হুগলি জেলায় তৃণমূলকে শেষ করছেন। উনি দল এবং সরকারের বদনাম করছেন। সাংসদের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করছেন। এই নাটক করার উদ্যেশ্য হল, ওঁর আর প্রবীর ঘোষালের আঁতাঁত আছে। উনি চাইছেন কর্মীদের উত্তেজিত করে তাড়িয়ে দিতে, যাতে তাঁরা প্রবীর ঘোষালের হয়ে কাজ করেন।’’
অন্য দিকে কল্যাণও পরে বলেন, ‘‘আমাকে লোকসভা ভোটে ৫ হাজার ভোটে হারিয়েছিল। কানাইপুরে বিজেপি জিতেছিল। এতেই বোঝা যাচ্ছে, কে বিজেপির সঙ্গে আছে। আর দলের প্রার্থীকে জেতাতে আমাকে জানতে হবে কোথায় কি অবস্থা। কর্মীসভায় সেগুলোই পয়েন্ট আউট করতে চেয়েছি।’’ একটা আচ্ছেলাল না থাকলে কিছু এসে যায় না বলেও মন্তব্য করেন কল্যাণ।