তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম-কে এক যোগে আক্রমণ প্রধানমন্ত্রী মোদীর।
বিধানসভা ভোটের আগে বাংলায় এসে প্রথম রাজনৈতিক সভাতেই রণকৌশল সাজিয়ে দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চিনিয়ে দিলেন রাজনৈতিক ‘শত্রু’দের। আর সেই প্রতিপক্ষদের একাসনে বসিয়ে আক্রমণও শানিয়ে গেলেন মোদী। তুললেন তৃণমূলের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের আঁতাঁতের অভিযোগ। পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বও।
বাংলায় ভোটের দামামা বাজার পর এই প্রথম রাজনৈতিক সভা করলেন প্রধানমন্ত্রী। হলদিয়ার সভা থেকে তৃণমূলকে আক্রমণের পাশাপাশি জুড়ে দিয়েছেন বাম-কংগ্রেসকেও। মোদী বলেন, ‘‘বাংলায় আমাদের লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। কিন্তু ওঁদের লুকিয়ে থাকা বন্ধুদের থেকেও সতর্ক থাকতে হবে। ম্যাচ-ফিক্সিং হয় শুনেছেন তো। বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেস মিলে রাজনীতির পর্দার পিছনে ম্যাচ ফিক্সিং করছে। বাংলায় হাত মিলিয়ে আছে বাম-তৃণমূল। তাই বাম-কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানেই তৃণমূলের সুবিধা।’’
কেমন আঁতাঁত? কৃষক আন্দোলন থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামেদের অবস্থান প্রায় একই রকম। সেই প্রসঙ্গ টেনেই বাম-কংগ্রেসকে নিশানা করে মোদী বলেন, ‘‘ওরা তৃণমূলের সঙ্গে লোক দেখানো লড়াই করে। দিল্লিতে ওরা এক। দরজা বন্ধ করে বৈঠক করে।’’ কেরলে প্রায় প্রতি ৫ বছর অন্তর সরকার বদল কংগ্রেস এবং সিপিএমের মধ্যে। সেই প্রবণতাকেও বাম-কংগ্রেসের ‘গট আপ’ বলে উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘‘পর্দার পিছনে খেলা চলছে। কেরলে যেমন বাম-কংগ্রেসের ফিক্সিং রয়েছে। পাঁচ বছর তুমি লুঠ কর, পাঁচ বছর আমি। বাংলাতেও তেমনটাই হচ্ছে।’’
তবে মোদীর এই অভিযোগকে নস্যাৎ করে পাল্টা বিজেপি-র বিরুদ্ধেই বামেদের সঙ্গে ‘ম্যাচ ফিক্সিং’-এর অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘ম্যাচ ফিক্সিং করার মতো টাকা আমাদের নেই। ও’সব বিজেপি-র সংস্কৃতি। লোকসভা নির্বাচনের আগে সিপিএম-কে টাকা দিয়ে ভোট নিয়েছিল বিজেপি। মিথ্যে অভিযোগ করছেন মোদী।’’
মোদীর এই আক্রমণের পাল্টা হিসেবে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘এতদিন দেখতাম বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে ভীত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন দেখছি প্রধানমন্ত্রীও জোটকে ভয় পাচ্ছেন। নিশ্চয়ই বাম কংগ্রেসের জোট তাদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমি কর্মীদের বলব, ধরো হাল শক্ত হাতে। জোটের কাছে তৃণমূল, বিজেপি দু'দলই হারবে।’’
প্রায় একই সুর কংগ্রেসেরও। দলের প্রবীণ নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূল গটআপ খেলে একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে আসল বিষয়গুলো থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছিলেন। কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে আম আদমির নাভিশ্বাস উঠেছে। দিন দিন বাড়ছে তেলের দাম। এ সবের জেরে দু'দলের উপরেই ক্ষুব্ধ। ওদের বোঝাপড়ার খেলাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই একমাত্র পথ হচ্ছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের জোটকে বেছে নেওয়া। এমন বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করেই ভয় পেয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঐক্যকে আক্রমণ করেছেন।"