অভিষেক যে রাজ্য সরকারের পাওনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ, তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বুধবারের শহিদ মিনারের সমাবেশ থেকেই। ছবি: ফেসবুক।
বকেয়া পাওনা নিয়ে গত সপ্তাহেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দু’দিনের ধর্না দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ঘোষণা করে দিয়েছেন বকেয়া না দিলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দিল্লি গিয়ে ধর্না দেবেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার আগে আরও একবার আলোচনার দরজা খুলল তৃণমূল। তাই দল বেঁধে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে রাজ্যের বকেয়া পাওনার দাবি জানাতে যাবে তৃণমূলের সংসদীয় দল। সেই সংসদীয় দলের নেতৃত্বে থাকবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তৃণমূল সংসদীয় দলের তরফে এমনটাই জানানো হয়েছে। আগামী বুধবার কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে তৃণমূল সংসদীয় দল। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে তৃণমূল সংসদীয় দল জানিয়েছে, মন্ত্রীর সুবিধে মতো সময় দিলে তাঁরা সেখানে গিয়েই সাক্ষাৎ করবেন।
এখন সংসদের বাজেট অধিবেশন চলছে। বিজেপির তরফে দলের লোকসভার ও রাজ্যসভার সাংসদদের অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই মন্ত্রীরা সকলেই সংসদের অধিবেশনেই রয়েছেন। তাই তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা, বুধবার গিরিরাজ সংসদ ভবনে নিজের দফতরে সময় দিলে, তাঁরা সেখানে গিয়ে সাক্ষাৎ করে আসবেন। রবিবার যখন অভিষেক দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন, তখনই তৃণমূল সংসদীয় দল এ বার কোনও বড় পদক্ষেপ করতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছিল। সোমবার লোকসভার অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন অভিষেক। মূলত তাঁর নেতৃত্বেই তৃণমূল সংসদীয় দল গিরিরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবেন।
অভিষেক যে রাজ্য সরকারের পাওনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ, তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বুধবারের শহিদ মিনারের সমাবেশ থেকেই। ওইদিনের জনসভায় রাজ্যের বকেয়া পাওনা নিয়ে পরিসংখ্যান তুলে ধরে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন তিনি। অভিষেক দাবি করেছিলেন, ১০৬টি প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সব মিলিয়ে মোট এক লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। এই তালিকায় রাজ্যের সবচেয়ে বেশি পাওনা রয়েছে গ্রামন্নয়ন মন্ত্রক থেকে। ১০০ দিনের কাজের টাকা গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ। এ ছাড়াও আবাস, সড়ক যোজনার মতো গ্রামীণ উন্নয়নের টাকা বন্ধ রেখেছে গিরিরাজের মন্ত্রক। বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্না মঞ্চে গিয়েও একই পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিজেপিকে আক্রমণ করেছিলেন অভিষেক। আবার শুক্রবার তৃণমূল ভবনের সাংবাদিক বৈঠকেও তাঁর গলায় ছিল কেন্দ্র বিরোধী সুর। ওই দিন অভিষেক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন।
তাই এ বার সরাসরি মন্ত্রী গিরিরাজের দ্বারস্থ হয়েই রাজ্যের পাওনাগণ্ডা চাইবেন তৃণমূল সাংসদরা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে রাজ্যের বকেয়া পাওনা নিয়ে সাক্ষাৎ করেছিলেন। আবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নবান্নে পূর্বাঞ্চল পরিষদের বৈঠকের জন্য এলে, তাঁর কাছেও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে সরব হয়েছিলেন। আবার পঞ্চায়েত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে প্রদীপ মজুমদারও দিল্লি গিয়ে গিরিরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু তাতেও কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই এ বারের সাক্ষাতে ইতিবাচক ফল হতে পারে বলেই আশা করছেন তৃণমূল সাংসদরা। তৃণমূল মুখপাত্র সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘রাজ্যের বকেয়া পাওনা কেন্দ্রকে দিতেই হবে। তাই মন্ত্রী যখন সময় দেবেন আমরা তাঁর কাছে গিয়ে রাজ্যের সম্পূর্ণ বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সরব হব।’’