অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
চোপড়ায় নিহত শিশুদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিল তৃণমূল। মঙ্গলবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ তিন লক্ষ টাকা করে সাহায্য তুলে দিয়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেকের নির্দেশ পেয়েই মন্ত্রী গোলাম রব্বানি একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে নিহত শিশুদের বাড়িতে যান। তখনই মৃত শিশুদের পরিবারের হাতে ওই অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
গত কয়েক মাস ধরে রাজ্য রাজনীতিতে অভিষেকের সক্রিয়তা ততটা লক্ষ করা না গেলেও তাঁর দাবি ছিল, রাজ্য রাজনীতিতেই রয়েছেন তিনি। কিন্তু সন্দেশখালি নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি শাসকদলকে চেপে ধরতেই তৎপর হয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। মঙ্গলবার দিনভর চোপড়ার ঘটনায় নজর রেখে দলীয় নেতাদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে ওই পরিবারগুলির পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। এই সময় তাদের যে কোনও ধরনের সাহায্য দিতে বলা হয়েছে সাধারণ সম্পাদকের দফতর থেকে। সন্দেশখালি নিয়ে যখন বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস একযোগে সরব হয়ে শাসকদল ও তাদের প্রশাসনকে নানা প্রশ্নের মুখে ফেলতে চাইছে, পাল্টা তৃণমূল নেতৃত্বও চোপড়ার বিষয়টিকে তুলে ধরে পাল্টা কেন্দ্রীয় শাসকদল বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছে। বাংলার রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে শিশুমৃত্যুর ঘটনার জন্য দায়ী করে তৃণমূল নেতৃত্ব এই ইস্যুটিকে তুলে ধরতে চাইছেন। মঙ্গলবার রাজ্যপালের সঙ্গেও সাক্ষাতের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে। সময় পাওয়া গেলে কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুরা তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, রাজপালের কাছে চোপড়ায় যাওয়ার আবেদন জানাবেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। রাজ্যের শাসকদলের প্রশ্ন, অশান্তির অভিযোগে রাজ্যপাল যদি সন্দেশখালি যেতে পারেন, তা হলে বিএসএফের গাফিলতিতে চারটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সিভি আনন্দ বোস কেন চোপড়া পরিদর্শনে যাবেন না? রাজভবন সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে সময় দেওয়া হয়েছে।
বিএসএফ অবশ্য এই ঘটনার দায় তাদের নয় বলে মঙ্গলবার রাতেই একটি প্রেস বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আদৌ বিএসএফ কোনও খননকার্য চালায়নি। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, সোমবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট নাগাদ চেতনগাছ আউট পোস্টে কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানরা অস্বাভাবিক কিছু শব্দ শুনতে পান। ৩০০ মিটার দূরের এলাকা থেকে ওই আওয়াজ আসছে জানার পরে কোম্পানি কমান্ডারকে খবর দেন জওয়ানরা। একটি দল ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গেই চলে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামবাসীরা মাটি খুঁড়ে কয়েকটি শিশুকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। গ্রামবাসীদের থেকে জানা যায়, ওই এলাকায় জেসিবি দিয়ে মাটি খোঁড়া হচ্ছিল। কয়েকটি ট্র্যাক্টরও ছিল সেখানে। পাশেই খেলছিল কয়েক জন। মাটিতে ধস নামলে তারা গর্তে পড়ে যায়। এর পরে বিএসএফ কর্মীরা শিশুদের উদ্ধার করেন। বিএসএফের দু’টি গাড়ি করেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন চোপড়া যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। বুধবারেই কমিশনের পাঁচ প্রতিনিধি যাবেন উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায়। তাই বিএসএফের বিবৃতির পরেও বুধবার চোপড়ার আঁচ বজায় থাকছে।