তাপস সাহা। ফাইল চিত্র।
তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতিদমন শাখার তদন্ত চলছে। এ বার প্রকাশ্যে আসা পুরনো একটি অডিয়ো ক্লিপে (আনন্দবাজার তার সত্যতা যাচাই করেনি) চাকরির জন্য টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে ফের শোনা গেল তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার নাম।
ওই অডিয়ো ক্লিপে টেলিফোনে নদিয়ার তেহট্ট ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস বিশ্বাস ওরফে বংশীর উদ্দেশে এক জনকে বলতে শোনা যায়, “ও চাকরি-বাকরি আর হবে না, টাকার দরকার... তাপস সাহার সঙ্গে তো আপনার সম্পর্ক ভাল, তাপস সাহা যে টাকাটা নিয়েছে সেটা কবে দিতে পারবে, আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন...।” বংশীকে কার্যত শাসাতেও শোনা যায় লোকটিকে, “আমরা কোথায় বলে ফেলি, কী করে ফেলি ঠিক নেই, লোক বাজে আমরা....।” ৩ অক্টোবর, ২০১৯-এর টাকা ফেরত দেওয়ার কথা হয়।
বিরোধীদের দাবি, দ্বিতীয় গলাটি তৃণমূলেরই চাঁদের ঘাট অঞ্চল সভাপতি তুহিন মণ্ডলের। শুক্রবার দেবাশিস দাবি করেন, তুহিন মণ্ডলই টেলিফোনে কথা রেকর্ড করে এই অডিয়ো ক্লিপ তৈরি করেছিলেন। ঘটনাচক্রে, তেহট্ট ২ ব্লক এবং চাঁদের ঘাট দুই-ই পলাশিপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ২০১৯ সালে সেখানকার বিধায়ক ছিলেন তাপস সাহা, আর বর্তমান বিধায়ক প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় ইডি-র হাতে ধৃত মানিক ভট্টাচার্য।
দেবাশিসের দাবি, “তুহিনের সঙ্গে বন্ধুবান্ধবের মতো কথা হয়েছিল। ওরা তাপসদাকে পলাশিপাড়া থেকে সরানোর জন্য দল পাকিয়েছিল। আমি সেটা জানতাম না।” যদিও তুহিন এ দিন দাবি করেন, “ওই অডিয়ো ক্লিপের গলা আমার নয়। চাকরি নিয়েও কোনও কথা হয়নি। আমার কিছু জানা নেই। আর কোনও মন্তব্য করব না।”
দেবাশিস এ দিন স্বীকার করেন, “কিছু টাকাপয়সা তো দেওয়া হয়েছিল।” কাকে? দেবাশিসের দাবি, “দেবব্রত মণ্ডল বলে এক জনের মারফত বিকাশ ভবনের কাউকে দেওয়া হয়েছিল। আমিও দিয়েছিলাম।” পরে তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন চাকরির জন্য টাকা দিয়েছিল। বেশির ভাগ টাকাই দেওয়া হয়েছিল প্রবীর কয়ালকে।” ঘটনাচক্রে, স্কুল ও সরকারি দফতরে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তোলার অভিযোগে তাপস-ঘনিষ্ঠ প্রবীর কয়ালকে আগেই গ্রেফতার করেছে দুর্নীতিদমন শাখা।
অডিয়ো ক্লিপে দেবাশিসের উদ্দেশে এক জনকে বলতে শোনা যায়, “মতির কাছে যে টাকা দেওয়া হয়েছে সেটাও ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।” তৃণমূল সূত্রের দাবি, এই ‘মতি’ হলেন পলাশিপাড়ার গোপীনাথপুরের তৃণমূল নেতা মতিউর রহমান। এ দিন মতিউর অবশ্য দাবি করেন, “আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এই মতি অন্য কেউ হতে পারে।” আর বিধায়ক তাপস সাহার দাবি, “আমি ওদের থেকে এক টাকাও নিইনি। তবে দেবু অর্থাৎ দেবব্রত মণ্ডলের থেকে ওরা টাকা পেতে পারে।” দেবব্রত মণ্ডল নামে কারও সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।