কোনও বড় মাপের তারকা নেই। ছবি আদৌ দর্শক টানতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন বলিপাড়ার একাংশ। এমনকি মুক্তির আগে সেই ছবির স্বত্বও কিনতে চাইছিলেন না বলিউডের অধিকাংশ পরিবেশক। কিন্তু তারকা ছাড়াই সেই ছবি বাজেটের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি আয় করেছিল।
নব্বইয়ের দশকে বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন প্রীতি জ়িন্টা। শাহরুখ খানের বিপরীতে ‘দিল সে’ ছবিতে অভিনয় করে কেরিয়ারের প্রথম ছবিতেই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন প্রীতি। ইতিমধ্যেই কুন্দন শাহের পরিচালনায় ‘কয়া কহেনা’ ছবির শুটিং শেষ করে ফেলেছিলেন নায়িকা। কিন্তু ছবিমুক্তি নিয়ে তৈরি হয় বিস্তর সমস্যা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘কয়া কহেনা’ ছবি মুক্তির আগে পরিবেশকদের খোঁজে নেমেছিলেন ছবিনির্মাতারা। কিন্তু এই ছবির জন্য কেউ খরচ করতে চাননি। ছবিতে বড় মাপের তারকার মুখ দেখতে চেয়েছিলেন অধিকাংশ পরিবেশক।
‘কয়া কহেনা’ ছবিতে প্রীতির পাশাপাশি অভিনয় করেছিলেন সইফ আলি খান এবং চন্দ্রচূড় সিংহ। সেই সময় দুই অভিনেতার মধ্যে কেউই দর্শকের মধ্যে তেমন জনপ্রিয় ছিলেন না বলে এক সাক্ষাৎকারে জানান ছবির প্রযোজক রমেশ তৌরানি।
রমেশ জানান, বলিউডের বহু পরিবেশক তাঁকে জানিয়েছিলেন, ‘কয়া কহেনা’ ছবিতে কোনও জনপ্রিয় তারকা থাকলে তাঁরা অর্থ বিনিয়োগ করতে রাজি হবেন। কোনও উপায় না দেখে বলিউডের ‘ভাইজান’-এর কথাই মাথায় আসে রমেশের।
বলিউডের অন্দরমহলে কান পাতলে জানা যায়, ‘কয়া কহেনা’ ছবির জন্য প্রথমে চন্দ্রচূড় সিংহ এবং মুকুল দেবকে পছন্দ করেছিলেন নির্মাতারা। কিন্তু শুটিং শুরুর সময় হাজির হননি মুকুল। চটজলদি কোন অভিনেতাকে প্রস্তাব দেবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না নির্মাতারা।
সাক্ষাৎকারে রমেশ জানান, শুটিং শুরুর আগে সইফকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন সইফ। তার পর প্রীতি, চন্দ্রচূড় এবং সইফকে নিয়ে ‘কয়া কহেনা’ ছবির শুটিং হয়। তবে তিন তারকার মুখ পছন্দ হয়নি বলিউডের পরিবেশকদের। তাই জনপ্রিয় মুখ চেয়েছিলেন তাঁরা।
রমেশ জানান, ‘কয়া কহেনা’ ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সলমনকে প্রস্তাব দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছিলেন ছবিনির্মাতারা। সে ক্ষেত্রে চন্দ্রচূড়কে ছবি থেকে বাদ দিতে হত নির্মাতাদের।
চন্দ্রচূড়কে পরিস্থিতির কথা জানানো হয়। পরিচিত মুখ না হলে ছবি বক্স অফিসে চলবে না, এমনটা জানানো হয় নবাগত নায়ক চন্দ্রচূড়কে। তখন অবশ্য কোনও উচ্চবাচ্য করেননি তিনি।
সলমনকে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হলে অভিনেতা রমেশকে বলেছিলেন, ‘‘আমি এই ছবির চিত্রনাট্যও শুনতে চাই না। আপনারা আমায় সব কথাই খুলে বলেছেন। আমি অভিনয় করব। কিন্তু চন্দ্রচূড়ের অনুমতি ছাড়া আমি অভিনয় করব না।’’
সলমন আরও বলেছিলেন, ‘‘আমি তেমন মানুষ নই যে অন্যের কাজ ছিনিয়ে নেব। আগে চন্দ্রচূড়ের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি আনতে হবে। তার পরই আমি শুটিং শুরু করব।’’ সলমন এবং রমেশের এই বার্তালাপ চার দেওয়ালের ভিতর হলেও তা কোনও ভাবে রটে যায়।
রমেশের দাবি, চন্দ্রচূড় জানতে পারেন যে তাঁকে ছবি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, তিনি যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেই চরিত্রেই আবার অভিনয় করতে দেখা যাবে সলমনকে।
চন্দ্রচূড় সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত ছিলেন। তাঁর পরিবর্তে যে সলমনকে প্রস্তাব দেওয়া হবে তা জানতে পেরে জেদ ধরে বসেন অভিনেতা। কিছুতেই তিনি ছবি থেকে বাদ পড়তে রাজি ছিলেন না।
সলমনের কানে চন্দ্রচূড়ের সিদ্ধান্তের কথা পৌঁছতেই ‘ভাইজান’ জানান যে, চন্দ্রচূড়কে যেন ছবি থেকে বাদ দেওয়া না হয়। কোনও জনপ্রিয় মুখ ছাড়াই ছবি মুক্তির পরামর্শ দেন সলমন। ২০০০ সালে সেই ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘কয়া কহেনা’ ছবি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল চার কোটি টাকা। ছবি মুক্তির পর তা বক্স অফিস থেকে প্রায় ২১ কোটি টাকা উপার্জন করে। কোনও বড় তারকা ছাড়াই সেই ছবি বাজেটের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি আয় করে।