বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই বিধায়ক পদে শপথ নিতে চান। এই মর্মে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে চিঠি পাঠালেন বরাহনগরের নবনির্বাচিত তৃণমূল প্রার্থী তথা অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিন বিধানসভায় এসেছিলেন তিনি। বিধানসভায় এসে তিনি যান স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। সেখানেই তাঁর শপথগ্রহণ ঘিরে তৈরি হওয়া জটিলতা প্রসঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ আলোচনা করেন স্পিকার বিমানের সঙ্গে। এর পরেই সংবাদমাধ্যমে রাজ্যপালকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি জানান সায়ন্তিকা। তাঁর চিঠি পাঠানোর কারণ প্রসঙ্গে বরাহনগরের বিধায়ক বলেন, ‘‘আমি জয়ী হওয়ার পর দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। আমার হাতে মাত্র দেড় বছর সময় রয়েছে বরাহনগরের মানুষের জন্য কাজ করে দেখানোর। অথচ, এখনও শপথ নিতে না পারায় বিধায়ক হিসেবে কাজ শুরু করতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়েই আমি রাজ্যপালকে চিঠি লিখেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি বিধানসভার সদস্য, এখান থেকেই আমাকে কাজ করতে হবে। তাই আমি চাই স্পিকার আমাকে শপথগ্রহণ করান। তাই আমি রাজ্যপালকে চিঠি লিখে সেই বিষয়ে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেছি।’’
উল্লেখ্য, বরাহনগরের নতুন নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক সায়ন্তিকাকে ২৬ জুন রাজভবনে ডেকেছেন রাজ্যপাল। কিন্তু সোমবার সায়ন্তিকা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনও ভাবেই রাজভবনে শপথ নিতে যাবেন না। নবনির্বাচিত বিধায়কের সঙ্গে সাক্ষাতের পর স্পিকার বিমান বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় নতুন বিধায়কদের শপথ নিতে না পারার জন্য বহুলাংশে রাজভবনের ভূমিকা রয়েছে। বিধায়কদের শপথগ্রহণ একটি সাংবিধানিক পরম্পরা। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের এই সব দেখতে হচ্ছে। রাজ্যপাল যদি আগ্রহী হন, তা হলে উনি বিধানসভায় এসে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে যান, আমরা সব বন্দোবস্ত করে দেব। আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’ তিনি আরও বলেন,‘‘লোকসভা উপনির্বাচনে জয়ী কোনও সাংসদকে রাষ্ট্রপতি শপথগ্রহণ করিয়েছেন— এমন দৃষ্টান্ত আমার জানা নেই। নতুন লোকসভা শুরু হল, আমরা দেখলাম প্রোটেম স্পিকার সব সাংসদকে শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কিন্তু কোনও সাংসদকে শপথবাক্য পাঠ করাননি।’’
অন্য দিকে, ভগবানগোলা থেকে জয়ী তৃণমূল বিধায়ক রায়াত হোসেন সরকার জানিয়েছেন, রাজভবন থেকে তাঁকে হোয়াট্সঅ্যাপ বার্তায় জানানো হয়েছে যে, মেল করে তাঁকে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সোমবার সকাল পর্যন্ত তিনি শপথগ্রহণ সংক্রান্ত কোনও মেল পাননি। তাই এই সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা কাটাতে তিনিও স্পিকার বিমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার দিনই পশ্চিমবঙ্গের দুই বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়। বরাহনগরে সায়ন্তিকা এবং ভগবানগোলায় রায়াত জয়লাভ করেন। সেই থেকেই শপথগ্রহণের অপেক্ষায় উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল বিধায়করা। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শপথবাক্য পাঠ করানো নিয়ে দ্বৈরথ হয়েছিল স্পিকার বিমান এবং তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত বিধানসভায় এসে মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করিয়েছিলেন ধনখড়। পরে বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়ের শপথগ্রহণ ঘিরেও জটিলতা তৈরি হয়েছিল। গত বছর ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় জয়ী হলে তাঁর শপথগ্রহণ ঘিরে দড়ি টানাটানি চলেছিল রাজভবন-বিধানসভার মধ্যে। শেষ পর্যন্ত উপনির্বাচনে জয়ী নির্মলচন্দ্রকে রাজভবনে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছিলেন রাজ্যপাল বোস। দুই বিধায়কের শপথগ্রহণ ঘিরে জটিলতা প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন স্পিকার এবং রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এখন নজর রাজভবনের দিকে।