কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
৮ ডিসেম্বর, ২০২৩। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। লোকসভার এথিক্স কমিটির সুপারিশে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করেছিলেন স্পিকার ওম বিড়লা। তার পর কেটে গিয়েছে সাড়ে ছ’মাস। মাথা উঁচু করেই সোমবার আবার লোকসভায় ফিরছেন মহুয়া। কৃষ্ণনগর থেকে ৫৬ হাজারের বেশি ভোটে জিতে পুনরায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। যে লোকসভা থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সাড়ে ছ’মাসের মধ্যে সেখানে আবার ঢুকবেন তিনি। এবং এ বার ঢুকবেন আরও ‘দাপট’ নিয়ে।
সোমবার অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশন শুরু। প্রোটেম স্পিকার ভর্তৃহরি মহতাবের তত্ত্বাবধানে সাংসদ হিসাবে শপথ নেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যেরা। সেই সঙ্গে একাধিক রাজ্যের নির্বাচিত সাংসদদের শপথগ্রহণও হবে সোমবার। মহুয়া সেখানে উপস্থিত থাকবেন। যদিও তাঁর শপথগ্রহণ হবে মঙ্গলে। সোমবার লোকসভা শুরুর আগে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পুরনো সংসদ ভবনের চত্বরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থান করবে তৃণমূলের সংসদীয় দল। মহুয়া সেই কর্মসূচিতেও যোগ দেবেন।
মহুয়া অবশ্য আগেই বলেছিলেন, তিনি ফিরবেন। মাথা উঁচু করেই ফিরবেন। সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পর লোকসভার বাইরের সিঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার বয়স এখন ৪৯ বছর। আগামী ৩০ বছর সংসদের ভিতরে-বাইরে লড়ব আমি। আমাকে ইডি বা সিবিআই দিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না।’’ সেই ‘প্রত্যাবর্তন’ নিয়ে সোমবার কৃষ্ণনগরের সাংসদ বলেন, ‘‘৮ ডিসেম্বর যখন আমাকে অবৈধ ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং সংসদে আমাকে আমার বক্তব্য বলতেও দেওয়া হয়নি, তখন আমি সংসদের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, মাথা উঁচু করে লোকসভায় ফিরব। আমাকে ইডি-সিবিআই দিয়ে ভয় দেখিয়ে দমানো বা হারানো যাবে না। আমি এবং আমরা সেটা করে দেখিয়েছি। আমরা ২৩৪ জন এখন লোকসভায় আছি। উল্টো দিকে, বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় যেতে তো পারেইনি, বিভিন্ন দলের সাহায্য নিয়ে নরেন্দ্র মোদী একটি পঙ্গু সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বসেছেন! ওঁর ‘অব কি বার ৪০০ পার’ স্লোগানের এই হাল দেখার পরেও উনি প্রধানমন্ত্রী কী করে হলেন, সেটাই আশ্চর্যের।’’
বস্তুত, এ বার লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হতে চলেছেন রাহুল গান্ধী। ফলে বিরোধীরা আগের চেয়ে আরও বেশি ‘দাপট’ নিয়ে সরকারের মোকাবিলা করবে বলেই মনে করছেন মহুয়ারা। কংগ্রেস যেমন ১০০টি আসন পেয়েছে, তেমনই তৃণমূল পেয়েছে ২৯টি আসন। সমাজবাদী পার্টি ৪০টি আসন পেয়েছে। মহুয়ার কথায়, ‘‘আমরা সকলে মিলে ২৩৪। বিজেপি একা ২৪০! মাত্র ছ’টা আসনের তফাত। ফলে এ বার সব কিছু আর অত সহজে হবে না।’’
লোকসভায় গিয়ে এক্সে (সাবেক টুইটার) ছবিও পোস্ট করেছেন মহুয়া।
‘প্রত্যাবর্তন’ নিয়ে মহুয়া নিজে যেমন আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, তেমনই তাঁর দলও তাঁর প্রতি আস্থা রেখেছিল। তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজের পর বলেছিলেন, ‘‘লাভ নেই। কয়েক মাস পরেই তো ভোট! মহুয়া তো আবার জিতবে, আবার ফিরবে!’’ কৃষ্ণনগরে একাধিক বার ভোটের প্রচারে গিয়েও মমতা বার বার এই প্রসঙ্গ তুলেছেন। বার বার তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘মহুয়াকে ওরা ভয় পায়। ও বিজেপির ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিল। তাই ওকে তাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ও আবার ফিরবে।’’
লোকসভা ভোটের আগে প্রশ্ন-ঘুষকাণ্ডে নাম জড়িয়েছিল মহুয়ার। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছিলেন, সংসদে আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করার জন্য মহুয়া দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে উপহার এবং নগদ টাকা নিয়েছেন। অভিযোগ জানিয়ে পৃথক ভাবে সিবিআই প্রধানকে চিঠি লেখেন মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাইও। তার পর থেকে এই বিতর্ক রাজ্য এবং জাতীয় রাজনীতিতে তুফান তোলে। মহুয়ার বিরুদ্ধে লোকসভার এথিক্স কমিটি তদন্ত করে এবং তাঁর সাংসদ পদ খারিজের সুপারিশ করে। ডিসেম্বরে লোকসভা থেকে মহুয়াকে বহিষ্কার করা হয়। অভিযোগ, সিদ্ধান্ত জানানোর আগে মহুয়ার বক্তব্য শুনতে চাননি স্পিকার।
তৃণমূল অবশ্য কৃষ্ণনগরে আবার ‘বহিষ্কৃত’ মহুয়াকেই প্রার্থী করে। তাঁর বিরুদ্ধে কৃষ্ণনগরের রাজ পরিবারের সদস্য অমৃতা রায়কে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। ওই কেন্দ্রে প্রচারেও জোর দিয়েছিল তারা। প্রধানমন্ত্রী নিজে দু’বার কৃষ্ণনগরে প্রচার করতে এসেছিলেন। কিন্তু মহুয়াকে দমানো যায়নি। তিনি কৃষ্ণনগরে জিতে আরও পাঁচ বছরের জন্য সংসদে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন। মঙ্গলবার সাংসদ হিসাবে দ্বিতীয় বার শপথগ্রহণ করবেন মৈত্র।