শওকত মোল্লা (বাঁ দিকে), নওশাদ সিদ্দিকি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লাকে জ়েড প্লাস নিরাপত্তা দিয়েছে রাজ্য সরকার। অন্য দিকে, নিজের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছেন ভাঙরের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভাঙড়। শাসকদল তৃণমূল এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে। তৃণমূলের হয়ে ভাঙর বিধানসভা এলাকার সংগঠনের দেখভাল এবং রাজনৈতিক জমি উদ্ধারের দায়িত্বে রয়েছেন বিধায়ক শওকত। আর বিপরীত শিবিরের নেতৃত্বে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ। যুযুধান দুই নেতার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। বিবৃতি পাল্টা বিবৃতির লড়াইয়ের জেরে ভাঙড়ে দু’দলের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে প্রায়শই। স্বাভাবিক ভাবেই দুই নেতাকে বার বার ছুটে যেতে হচ্ছে উপদ্রুত এলাকায়।
সোমবারই জ়েড প্লাস নিরাপত্তা চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন নওশাদ। মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা। নওশাদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের বক্তব্য, সম্প্রতি অশান্ত হয়ে উঠেছে ভাঙড়। এলাকার বিধায়কের কোনও নিরাপত্তা নেই। এই অবস্থায় হামলার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জেড প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া হোক। এই মামলায় রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকেও যুক্ত করা হয়েছে।
তাই পরিস্থিতি বুঝেই ক্যানিং পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শওকতকে জেড প্লাস নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। এ বিষয়ে বিধায়ক শওকত বলেছেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কিছু উপলব্ধি করেছেন। বিশেষ করে, ভাঙড়ের মাটিতে যে সন্ত্রাস চলছে, কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন, তার ফলে আমাকে জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’ শওকত আরও বলেন, ‘‘অনেক সমাজবিরোধীকে রাতের অন্ধকারে ভাঙড়ের বিভিন্ন জায়গায় ঢোকানো হয়েছিল। আমাদের রাজু নস্করকে যে ভাবে আইএসএফের সমাজবিরোধীরা খুন করেছে, তাতে নজির তৈরি হল। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করব, যারা জড়িত, তাদের গ্রেফতার করতে হবে।’’
অপর দিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছেন নওশাদ। যদিও নওশাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, এখনও তাঁদের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে কোনও বার্তা আসেনি। আদৌ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে আইএসএফ বিধায়ককে কোনও নিরাপত্তা দেওয়া হবে কিনা তা-ও তাঁদের অজানা। আইএসএফ বিধায়ক কেন্দ্রের কাছে নিরাপত্তা চাওয়ায় আক্রমণ শানিয়েছে শাসক দল তৃণমূল। তাঁদের কথায়, আইএসএফ যে বিজেপির প্রতিনিধি হয়ে এ রাজ্যে কাজ করছে, তা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আসলে আইএসএফের কাজ হচ্ছে সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বসিয়ে বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়া। জবাবে নওশাদ শিবির জানিয়েছে, গত দু’বছরের বেশি সময় নানা ভাবে ভাঙড়ের বিধায়ককে অপদস্থ করার চেষ্টা করেছে শাসকদল। কখনও নিজের বিধানসভাতেই আক্রান্ত হয়েছেন তিনি, কখনও অসম্মানিত করা হয়েছে সামাজিক ভাবে। বলা হয়েছে, ফুরফুরা শরীফের এই পিরজাদা নাকি হাওলায় টাকা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত। আবার কখনও অনৈতিক ভাবে ৪১ দিন জেলে রাখা হয়েছে। এই অবস্থায় যাঁরা শওকতের মত নেতাকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তাঁদের কাছ থেকে আদৌ নওশাদ নিরাপত্তা পাবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আইএসএফ নেতৃত্বের মনে। তাই রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন না জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুরক্ষার আবেদন জানিয়েছেন ভাঙরের বিধায়ক। একই সঙ্গে নিজের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে হাই কোর্টেও মামলা করছেন নওশাদ।