ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক (বাঁ-দিকে) শওকত মোল্লার। —ফাইল চিত্র।
ফুরফুরা শরিফে তাঁর বিরুদ্ধে ‘চোর চোর’ আওয়াজ তোলার নেপথ্যে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ এবং নওশাদের দাদা আব্বাস সিদ্দিকির মদত রয়েছে। সোমবার এমনই দাবি করলেন ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক তথা ভাঙড়ে শাসকদলের নবনিযুক্ত পর্যবেক্ষক শওকত মোল্লা। তাঁর আরও দাবি, ফুরফুরার মতো ‘পবিত্র তীর্থস্থানে’ তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে। যদিও শওকতের সমস্ত অভিযোগ খণ্ডন করে নওশাদের পাল্টা দাবি, কেউ যদি এমন করে থাকেন, সে দায় তাঁর নয়।
ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর রবিবার রাতে পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে দেখা করতে হুগলির ফুরফুরা শরিফে যান শওকত। অভিযোগ, পিরজাদার সঙ্গে দেখা করে ফুরফুরার মাজার শরিফ এলাকায় ঘোরার সময় তাঁকে দেখে ‘চোর চোর’ বলে আওয়াজ দেন এক দল লোক। এই ঘটনায় তিনি মর্মাহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শওকত। তিনি বলেন, ‘‘এতে আমাদের যথেষ্ট অপমান করা হয়েছে। আব্বাস সিদ্দিকি এবং নওশাদ সিদ্দিকির মদতেই এমনটা হয়েছে।’’ শওকতের মন্তব্য, ‘‘ফুরফুরা শরিফ অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান। সর্বশক্তিমানের কাছে আশীর্বাদ নিতে সেখানে যান সাধারণ মানুষ। সেখানে কোনও রাজনৈতিক কার্যক্রম চলে না। অথচ এক জন রাজনৈতিক নেতা হিসাবে আমাকে হেনস্থা করা হল। এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। কেন এমনটা হল, তা দেখার জন্য অন্য ধর্মগুরুদের বলব আমি।’’
শওকতের এই অভিযোগ খণ্ডন করেছেন নওশাদ। ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-র একমাত্র বিধায়ক বলেন, ‘‘এটা পুরোপুরি মিথ্যা অভিযোগ। যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, সেই সময় আমি বা আমার দাদা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। আমি ভাঙড়ে ছিলাম। দাদা নিজের কাজে বাইরে বেরিয়েছিলেন। আমি আজ (সোমবার) সকালে ঘটনার কথা জানতে পারি। তবে এটাও ঠিক যে, কোনও গরিব মানুষ যদি নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে কোনও নেতাকে দেখে এমন কিছু কথা বলেন, তার দায় আমার নয়!’’
ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শওকত এবং নওশাদের মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে হারের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা-মন্ত্রীদের নিয়ে কমিটি গড়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তাই বাড়তি সতর্ক শাসকদল। এই নির্বাচনের আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়কে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শনিবার তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব সেখানকার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর পর ভাঙড় বিধানসভার পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শওকতকে। যদিও তা নিয়ে নওশাদের মন্তব্য ছিল, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক হলে ভাল হত। ভাঙড়ের তৃণমূল নেতাদের জলাভূমি ভরাট, সিন্ডিকেট রাজ, আবাস প্লাসে দুর্নীতি, তোলাবাজি নিয়ে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়ে তাঁরা জানতে পারতেন।’’
শওকতের বিরুদ্ধে বেফাঁস মন্তব্য করেছেন ভাঙড়ের আর এক তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদও। তাঁর দাবি, ‘‘শওকত মোল্লাকে অবজ়ারভার (পর্যবেক্ষক) করাই হয়নি! ভাঙড়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে একটা রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে দলকে! ‘অবজ়ারভার’ ওয়ার্ডই (শব্দটিই) ব্যবহার হয়নি। আমি হয়তো ভুল শুনেছি।’’