ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি এবং তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা। ফাইল চিত্র।
যে সব পির ভাই সক্রিয় রাজনীতি করেন, তাঁদের তিনি সম্মান করেন না। রবিবার ফুরফুরা শরিফে গিয়ে পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে সাক্ষাতের পর ভাঙড়ের ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে এ ভাবেই নিশানা করলেন তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা। জেলমুক্তির পর রবিবার প্রথম নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে গিয়েছিলেন নওশাদ। আইএসএফ বিধায়কের এই কর্মসূচি নিয়েও কটক্ষ করেছেন শওকত।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়কে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে তৃণমূল। শনিবার সেখানকার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। ভাঙড় বিধানসভার পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকতের কাঁধে। এর পরই নওশাদ বনাম শওকত বাগযুদ্ধ শুরু হয়েছে। শওকতের এই নতুন দায়িত্ব নিয়ে নওশাদ বলেছেন, ‘‘শওকতের নামে অনেক অভিযোগ আছে। তবে তিনি গণতন্ত্রকে হত্যা করবেন এটা আমি আশা করব না। তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করবেন। তবে যদি কেউ মনে করে প্রশাসনের একটি অংশকে কাজে লাগিয়ে ভাঙড় থেকে আইএসএফকে অগণতান্ত্রিক ভাবে উৎখাত করবে সেটা ভাঙড়ের মানুষ হতে দেবে না।’’
নওশাদের এই মন্তব্যের পরই পাল্টা সরব হয়েছেন শওকত। রবিবার ফুরফুরা শরিফে যান তিনি। রাত ৮টা নাগাদ দেখা করেন পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে। প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে তাঁদের মধ্যে কথা হয়। সেই সাক্ষাতের পর শওকত জানান, পিরজাদার দোয়া নিয়ে মাঝেমধ্যে তিনি ফুরফুরা শরিফে যান। সেই কারণেই রবিবার গিয়েছেন। তবে ভাঙড়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই ফুরফুরা শরিফে গিয়ে পিরজাদার সঙ্গে শওকতের সাক্ষাৎ আলাদা নজর কেড়েছে।
পিরজাদাদের সম্মান করার কথা বলার পাশাপাশি নওশাদ এবং তাঁর দাদা আব্বাসকে বিঁধেছেন শওকত। বলেছেন, ‘‘যে সমস্ত পির ভাই সক্রিয় রাজনীতি করেন, তাঁদের সম্মান করি না। ফুরফুরার অন্য পির ভাইদের সম্মান করি।’’ রবিবার ভাঙড়ে নওশাদের কর্মসূচিতে ১ হাজার লোক হয়েছিল কি না সে নিয়েও খোঁচা দেন তিনি।
বিধানসভা ভোটের মতো পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ভাঙড়ে আইএসএফের কর্তৃত্ব বজায় রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নওশাদ। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে শাসককে খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ভাঙড়ের ফল নিয়ে শওকত পাল্টা বলেছেন, ‘‘ভাঙড়ের মানুষ জানে কতটা উন্নয়ন হয়েছে।’’ ভাঙড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘ভাইয়ে-ভাইয়ে সামান্য একটু মনোমালিন্য হয়। সেটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
শওকতের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন ত্বহা সিদ্দিকিও। তিনি জানিয়েছেন, সব রাজনৈতিক নেতারাই তাঁর কাছে যান দোয়া নিতে। উন্নয়নের পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান আরও এক বার স্পষ্ট করেছেন ত্বহা। পাশাপাশি বলেছেন যে, নওশাদ রাজনীতি করছেন, সেটা তাঁর ভাইপোর ব্যক্তিগত ব্যাপার। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনের হারের পর সংখ্যালঘু মন বুঝতে সংখ্যালঘু নেতা-মন্ত্রীদের নিয়ে কমিটি তৈরি গড়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে তপন দাশগুপ্তকে। এই দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে ফুরফুরায় গিয়ে ত্বহার সঙ্গে দেখা করেছিলেন তপনও। তার পর এ বার ত্বহার সঙ্গে সাক্ষাৎ সারলেন শওকত।