বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক তাঁর আপ্তসহায়ক (বাঁ-দিকে) প্রবীর কয়াল। ফাইল চিত্র।
কোটি কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণা-কাণ্ডে তাঁকে ফাঁসিয়েছেন তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা। বুধবার এমন দাবিই করলেন তাপসের আপ্তসহায়ক প্রবীর কয়াল। গত শুক্রবার রাতেই তাঁকে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতিদমন শাখা। প্রবীরের আরও দাবি, তাপস নিজেই কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এখন এই কেলেঙ্কারিতে তাঁকে জড়িয়েছেন।
বুধবার সকাল থেকে প্রবীরকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায় রাজ্য পুলিশের দুর্নীতিদমন শাখার বিশেষ দল। সেই সময় প্রবীরের বাড়ি থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় তেহট্ট থানায় নিয়ে আসা হয় প্রবীরকে। সেখান থেকে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন তদন্তকারীরা। থানা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় প্রবীরের বিস্ফোরক উক্তি, ‘‘তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা আমাকে ফাঁসিয়েছেন। নিজে আর্থিক কেলেঙ্কারি করে তাতে আমাকে জড়িয়েছেন। আমি যা টাকা তুলেছি, সবই তাপস সাহাকে দিয়েছি।’’
প্রবীর গ্রেফতার হওয়ার পর তাপস যদিও তাঁকে নিজের আপ্তসহায়ক বলে মানতে চাননি। বিধানসভা এলাকার এক জন নাগরিক হিসাবেই প্রবীরকে চিনতেন বলে জানিয়েছিলেন বিধায়ক। যদিও বুধবার প্রবীর বলেন, ‘‘এলাকার মানুষ জানে সাত বছর ধরে আমি বিধায়কের আপ্তসহায়ক ছিলাম।’’
প্রবীর বলেন, ‘‘তিনি (তাপস) প্রায় ১০ কোটি টাকা লুঠ করেছেন।’’ প্রবীর নিজে কত টাকা নিয়েছেন? সে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগেই অবশ্য তাঁকে গাড়িতে তুলে থানা চত্বর থেকে বেরিয়ে যান দুর্নীতিদমন শাখার আধিকারিকেরা।
বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের এসপি অফিস থেকে দুর্নীতিদমন শাখার আধিকারিকেরা প্রবীরকে সঙ্গে নিয়ে তেহট্টের উদ্দেশে রওনা দেন। এর আগে থেকেই অবশ্য তাপস এবং প্রবীরের বাড়ির সামনে অতিরিক্ত সুরক্ষার বন্দোবস্ত করেছিল তেহট্ট থানা। দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ খাসপুর বয়ারবাঁদা এলাকায় প্রবীরের বাড়িতে তাঁকে নিয়ে পৌঁছয় দুর্নীতিদমন শাখার বিশেষ দলটি। সেখানে স্থানীয় সাক্ষী মহিতোষ মণ্ডল, রাজু মণ্ডল এবং ঘোঁতা নামে এক জনকে ডেকে পাঠানো হয়। তল্লাশিতে প্রবীরের বাড়ি থেকে বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এর পর প্রবীরের বাড়িতেই চলে প্রায় তিন ঘণ্টার ম্যারাথন জেরা। তাতে নতুন তথ্যও মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। সেই তথ্য মিলিয়ে দেখার জন্য প্রবীরের শ্বশুরবাড়ির এক সদস্যকেও ডেকে পাঠানো হয়। এর পর তেহট্ট থানায় নিয়ে আসা হয় প্রবীরকে। সেখান থেকে বেরোনোর সময়েই তাপসের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দাবি করেন প্রবীর।
এ প্রসঙ্গে তাপসের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।