গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ধরা পড়ার পর থেকে তদন্তকারীরা তাকে যে যে প্রশ্ন করেছেন, সুশান্ত চৌধুরী হয় নীরব থেকেছে, অথবা পাল্টা জিজ্ঞাসা করেছে, ‘‘ও মরেছে তো!’’ তদন্তকারীদের থেকেই সুতপা চৌধুরীর মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেয়েছে সে। বুধবার দুপুরেও পুলিশি হেফাজতে থাকা সুশান্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। সেই সময়েও সুশান্ত জিজ্ঞেস করেছে, ‘‘ও মরেছে কনফার্ম তো!’’ যা দেখেশুনে পোড় খাওয়া পুলিশ আধিকারিকরাও চমকে উঠছেন। ‘খুনি’ সুশান্তের মধ্যে এক বিন্দুও অনুশোচনা বোধ তৈরি হয়নি। পুলিশি জেরার মুখে সুশান্ত আগাগোড়াই নির্লিপ্ত রয়েছে বলেও তদন্তকারীদের একাংশের দাবি। তার এ হেন আচরণে ‘স্তম্ভিত’ ঝানু পুলিশ আধিকারিকেরাও।
সোমবার সন্ধ্যায় বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকায় মেসের বাইরে খুন হন উদ্ভিদবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুতপা। মেসের বাইরে বেরোতেই তাঁর উপর আচমকা ছুরি নিয়ে হামলা করে সুশান্ত। বার বার সুতপার দেহে ছুরির আঘাত করে। পরে সেখান থেকে চম্পট দেয়। পরে যদিও গ্রেফতার করা হয় তাকে। মঙ্গলবার আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, বছর কুড়ির সুতপার দেহ থেকে ছুরির আঘাতের তিনটি ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। রক্তাক্ত সুতপাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। তবে খুনি সুশান্ত কিন্তু নির্বিকার। জেরার মুখে পড়েও সুতপার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেয়েছে বছর বাইশের ওই যুবক। পুলিশের কাছে বার বার তাঁর প্রশ্ন— ‘‘(সুতপা) মারা গিয়েছে তো! আপনারা মিথ্যে বলছেন না তো?’’
নিজেদের হেফাজতে সুশান্তকে পেয়ে তাকে দফায় দফায় মোট ছ’ঘণ্টা জেরা করেছে বহরমপুর থানার পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেরা শুরুর পর বুধবার সকালেও সুশান্তকে এক প্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করা তো দূর অস্ত্, জেরায় ভাবলেশহীন থেকেছে সে।
বুধবার দুপুরের জেরায় সুশান্ত যদিও ভেঙে পড়ে। তখন সে পুলিশকে জানিয়েছে, কী ভাবে সুতপার উপরে নজরদারি করত। কী ভাবে এবং কেন তাকে খুন করেছে, সে কথাও পুলিশকে জানিয়েছে সুশান্ত। বলেছে, ‘‘আমার সব শেষ! আমি তো যখন তখন মারা যাব।’’ যদিও দুপুরেও সে পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছে, ‘‘ও মরেছে তো!’’