তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। —ফাইল চিত্র।
উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসকের সঙ্গে বিবাদের জেরে রাজনীতি ছাড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। রায়গঞ্জের বিধায়কের অভিযোগ, তিনি দলে থেকে নিজের মতো করে কাজ করতে পারছেন না। জেলাশাসকের বিরুদ্ধে কৃষ্ণের ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসার পরেই তাঁর তৃণমূল ছাড়া নিয়ে জল্পনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিধায়ক ফেসবুকে লিখেছেন, “আমি কৃষ্ণ কল্যাণী, এক জন জনপ্রতিনিধি। জেলাশাসক হলেন জনগণের সেবক। যদি পরিস্থিতি না বদলায় তা হলে আমি রাজনীতি ছাড়তে বাধ্য হব। আমি কোনও দলের হয়ে আর কাজ করব না। আমি স্বাধীন ভাবে মানুষের পাশে থেকে তাঁদের সাহায্য করতে চাই।”
কৃষ্ণ কল্যাণীর পোস্ট।
মঙ্গলবার সমাজমাধ্যমে কৃষ্ণের এই পোস্টটি ঘিরে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। এর আগে, গত ২৩ অগস্ট সমাজমাধ্যমে বিধানসভার পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকেও ইস্তফা দেওয়ার কথা লিখেছিলেন কৃষ্ণ। তার পরেই গত ১০ সেপ্টেম্বর সেই পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। এ বার, জেলাশাসকের সঙ্গে বিবাদের কারণে রাজনীতি ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিলেন কৃষ্ণ।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে রায়গঞ্জ থেকে প্রার্থী হন কৃষ্ণ। প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জয়ী হন তিনি। কিন্তু ভোটের কয়েক মাস পরেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। বিজেপি বিধায়ক হয়ে তৃণমূলে যোগদান করায়, তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে স্পিকারের কাছে আবেদন করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দীর্ঘ শুনানির পর বিধায়ক পদে থেকে গিয়েছিলেন কৃষ্ণ। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায় তৃণমূলে যোগদান করলে তাঁকেই বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান করেছিলেন স্পিকার। কিন্তু শারীরিক কারণ দেখিয়ে মুকুল পিএসির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ালে সেই পদে কৃষ্ণকে বসিয়েছিলেন স্পিকার।
চলতি বছর ১০ মার্চ ব্রিগেড সমাবেশ থেকে রায়গঞ্জ লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে কৃষ্ণের নাম ঘোষণা করে তৃণমূল। তাই পিএসির চেয়ারম্যান পদ-সহ বিজেপির প্রতীকে জেতা বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। তবে, এই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী কার্তিকচন্দ্র পালের কাছে ৬৮ হাজার ১৭৯ ভোটে পরাজিত হন কৃষ্ণ। তাঁর পদত্যাগের কারণেই শূন্য হয়েছিল রায়গঞ্জ বিধানসভা। সেই বিধানসভার উপনির্বাচনে আবারও তাঁকে প্রার্থী করে তৃণমূল। লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জে ৪৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকা আসনে জয় পান তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ। তার পরেই তাঁকে বিধানসভার পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে মনোনীত করেন স্পিকার। গত ১০ সেপ্টেম্বর বিধানসভার পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকেও ইস্তফা দেন কৃষ্ণ। পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শাসক শিবিরকে কিছুটা হলেও ‘অস্বস্তি’তে ফেলে দেন কৃষ্ণ।