তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। —ফাইল ছবি।
বিধানসভার পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন রায়গঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। সম্প্রতি বিধানসভায় এসে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে গিয়েছেন তিনি। তবে কৃষ্ণের পদত্যাগ তৃণমূল পরিষদীয় দলের কাছে খানিকটা ‘অপ্রত্যাশিত’ই মনে হয়েছে। ২০২১ সালের মেদিনীপুর বিধানসভা থেকে জয়ী হন অভিনেত্রী জুন মালিয়া। বিধানসভার সদস্য হিসাবে তাঁকে পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যান পদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু লোকসভা ভোটে তিনি মেদিনীপুর লোকসভা আসনে জয়ী হয়ে সাংসদ হয়েছেন। যে কারণে তাঁকে ছাড়তে হয়েছে বিধায়ক পদ। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই বিধানসভার পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যান পদটিও ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। আর রায়গঞ্জ লোকসভায় শাসকদলের প্রার্থী হিসাবে পরাজিত হয়েছেন কৃষ্ণ। কিন্তু উপনির্বাচনে ফের রায়গঞ্জ বিধানসভাতেই জয় পেয়েছেন তিনি। তাই তাঁকে ওই পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এই ব্যবসায়ী রাজনীতিক। নিজের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে রায়গঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, ‘‘ওই কমিটির বিষয়টি আমার পছন্দের নয়। তাই আমি ওই কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’’ বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, তাঁর সেই ইস্তফা গৃহীতও হয়েছে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি গিয়ে রায়গঞ্জ থেকে প্রার্থী হন রায়গঞ্জের ব্যবসায়ী নেতা কৃষ্ণ। প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জয়ী হন তিনি। কিন্তু ভোটের কয়েক মাস পরেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। বিজেপি বিধায়ক হয়ে তৃণমূলে যোগদান করায়, তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে স্পিকারের কাছে আবেদন করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দীর্ঘ শুনানির পরও বিধায়ক পদে থেকে গিয়েছিলেন কৃষ্ণ।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায় তৃণমূলে যোগদান করলে তাঁকেই বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান করেছিলেন স্পিকার। কিন্তু শারীরিক কারণ দেখিয়ে মুকুল পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ালে সেই পদে কৃষ্ণকে বসিয়েছিলেন স্পিকার। সেই পদ গ্রহণ করলেও এ বার বিধানসভার পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন কৃষ্ণ।
চলতি বছর ১০ মার্চ ব্রিগে়ড সমাবেশ থেকে রায়গঞ্জ লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে কৃষ্ণের নাম ঘোষণা করে তৃণমূল। তাই পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ-সহ বিজেপির প্রতীকে জেতা বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী কার্তিকচন্দ্র পালের কাছে ৬৮ হাজার ১৭৯ ভোটে পরাজিত হন কৃষ্ণ। তাঁর পদত্যাগের কারণেই শূন্য হয়েছিল রায়গঞ্জ বিধানসভা। সেই বিধানসভার উপনির্বাচনে আবারও তাঁকে প্রার্থী করে তৃণমূল। লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জে ৪৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকা আসনে জয় পান তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ। তার পরেই তাঁকে বিধানসভার পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে মনোনীত করেন স্পিকার। কিন্তু সেই পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শাসক শিবিরকে কিছুটা হলেও ‘অস্বস্তি’তে ফেলে দিয়েছেন কৃষ্ণ।