পবন সিংহ। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে আসানসোলে তাঁকে প্রার্থী করে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল বিজেপিকে। তৃণমূলের ‘চাপের মুখে’ শেষ পর্যন্ত প্রার্থী নিজেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। সে বার যে কারণে পদ্মশিবির অস্বস্তিতে পড়েছিল, সেই একই কারণেই এ বার অস্বস্তিতে পড়ল বঙ্গের শাসকদল। বাংলা পক্ষ-সহ একাধিক সংগঠনের ‘চাপে’ ভোজপুরি গায়ক পবন সিংহের গানের অনুষ্ঠান বাতিল করলেন জামুড়িয়ার তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিংহ। বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের কারণেই যে এই সিদ্ধান্ত, শনিবার তা স্পষ্টও করে দিয়েছে বিধায়ক-শিবির। এ নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করা শুরু করে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, এ ভাবে অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া মানে শিল্পীকে অপমান করা!
কালীপুজোর অনুষ্ঠানে পবনকে গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক এবং তাঁর ছেলে তথা তৃণমূলের যুব নেতা প্রেমপাল সিংহ। তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল বাংলা পক্ষ। তাদের বক্তব্য ছিল, পবন ‘বাঙালি নারী বিদ্বেষী’। তাঁর বিভিন্ন গান এবং ভিডিয়োতে বাংলার ‘মহিলাদের প্রতি অশালীনতা’ প্রকাশ পেয়েছে। ওই কারণ দেখিয়েই লোকসভা ভোটে পবনের প্রার্থিপদের বিরোধিতা করেছিল তৃণমূল। মাঠে নেমেছিলেন দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেই দলেরই বিধায়ক কী ভাবে পবনকে গানের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালেন? শুধু বাংলা পক্ষই নয়, একাধিক সংগঠন তৃণমূল বিধায়কের সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল। এর পরেই শনিবার পবনের গানের অনুষ্ঠান বাতিলের কথা জানানো হল। জামুড়িয়ায় বিধায়ক কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রেমপাল বলেন, ‘‘পবন সিংহের গানের অনুষ্ঠান বাতিল করা হল। বিভিন্ন সংগঠন-সহ অনেকেই এই অনুষ্ঠান বাতিল করার জন্য আন্দোলনমুখী হয়েছিলেন। সেই কারণে আমরা এই অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
পাল্টা বিজেপি নেত্রী আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘‘কোনও গায়ককে এ ভাবে অপমান করা ঠিক নয়। বাংলা পক্ষের কথায় পবন সিংহের গান বাতিল করা উচিত নয়। গায়ক গায়কের মতো করে গান করে। নরেন্দ্র মোদী শিখিয়েছেন, আমরা সবাই ভারতবর্ষের নাগরিক। আমরা সবাই ভারতীয়। কয়েক দিন আগে শিলিগুড়িতে এই বাংলা পক্ষের সদস্যেরা বিহার থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের কী ভাবে মারধর করেছে, তা গোটা রাজ্য দেখেছে। আবার বিহারের এক জন ভোজপুরি গায়ককে বাংলায় অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার জন্য যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তাতে রাজ্যের মান অনেকটাই নীচে নেমে গেল।’’
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে আসানসোলে প্রথমে পবনকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। এর পরেই ভোজপুরি গায়কের বিরুদ্ধে প্রচারে নামে তৃণমূল। যার পরিণাম— ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন পবন। পরে আসানসোলে এসএস অহলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। তিনি জিততে পারেননি। জিতেছেন তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিন্হা।