রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ছাড়া এই কর্মসূচিতে শনিবার যোগ দেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
চা বাগানের শ্রমিকদের দাবিদাওয়া মেটাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লার হস্তক্ষেপ দাবি করলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। এর অন্যথা হলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের অবস্থান বিক্ষোভের কর্মসূচি চলবেই। শনিবার বার্লার এই কর্মসূচিতে যোগদান করে এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মলয়। যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা চেষ্টায় এই কর্মসূচি পালন করছে তৃণমূল।
শনিবার আন্দোলনকারীদের মধ্যে দাঁড়িয়ে মলয়ের দাবি, বামেদের শাসনকালে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন চা শ্রমিকেরা। তবে তৃণমূল সরকার তাঁদের বেতন বাড়িয়েছে। মলয়ের কথায়, ‘‘৩৪ বছর ধরে বামেদের আমলে বঞ্চিত হয়েছেন চা বাগানের শ্রমিকেরা। এক এক বছরে ১-২ টাকা করে তাঁদের বেতন বাড়ত। বামেরা ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার সময় দৈনিক ৬৭ টাকা করে নগদে বেতন পেতেন তাঁরা। আমাদের সরকার আসার পর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁরা দৈনিক ২৩২ টাকা করে বেতন পাচ্ছেন। ত্রিপাক্ষিক চুক্তির বাস্তবায়ন হলে তাঁদের বেতনও বাড়বে। তা ছাড়া, রাজ্য সরকারের ৭৮টি প্রকল্পেরও সুবিধা পাবেন তাঁরা।’’
কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বার্লার বাড়ির সামনে বুধবার থেকে একটানা ধর্না শুরু করেছেন জলপাইগুড়ি আইএনটিটিইউসি এবং তৃণমূলের চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মী-সমর্থকেরা। মূলত চার দফা দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগ, চা শ্রমিকদের পিএফের টাকা নিয়ে দুর্নীতি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর বাজেটে চা শ্রমিকদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন, সে টাকা নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে। শ্রমিকদের অবসরের বয়স ৫৮ বছর করার দাবিও তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া, চা বাগানের ছাত্র-ছাত্রীদের ভাতার টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। তা চালু করার মতো মূলত চার দফা দাবি ছাড়াও একাধিক দাবিদাওয়ায় এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। যে কোনও বিশৃঙ্খলা এড়াতে এলাকায় মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী।
শনিবার মলয় ছাড়া এই কর্মসূচিতে যোগ দেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া রয়েছেন আইএনটিটিইউসি জেলা সভাপতি রাজেশ লাকড়া, তৃণমূলের চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজু গুরুং, তবারক আলি, সুজু ছেত্রী, সঞ্জয় কুজুর-সহ অনেকে। আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত এই ধর্না চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। মলয়ের দাবি, ‘‘বিজেপির নেতা-নেত্রীরা চা বাগানের শ্রমিকদের কথা ভাবেন না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা কোনও পদক্ষেপ না করলে আমাদের আন্দোলন চলবে।’’
তৃণমূলের মন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির পর পাল্টা দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বার্লা। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন। তাই মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে রাজ্য সরকার। আগে সেগুলির হিসাব দিক তারা। মানুষের পাশে যদি দাঁড়াতেই হয়, তা হলে কলকাতায় ধর্নামঞ্চে যে চাকরিপ্রার্থীরা রয়েছেন, তাঁদের পাশে থাকুক (তৃণমূল)। আর চা বাগানের শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে চাইলে আমার বাড়ির সামনে নয়, থানা এবং জেলাশাসকের দফতরের সামনে ধর্না দিক।’’