প্রতীকী ছবি।
একশো দিনের কাজে টাকা আটকে দেওয়ার প্রতিবাদে মিছিলের ডাক দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫ ও ৬ জুন রাজ্যের সব ব্লকে, বুথে হবে প্রতিবাদ। ৫ জুন আবার জামাইষষ্ঠী। দল আর শ্বশুরবাড়ির মধ্যে একটাকে বেছে নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন অনেক নেতাই। সোমবার সন্ধ্যায় যেমন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চেয়ারম্যান তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন দলেরই এক অঞ্চল সভাপতি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জনা কয়েক দলীয় কর্মী-সমর্থক। এলাকার কিছু সমস্যা জানানোর পরে অজিতের কাছে ওই অঞ্চল সভাপতির আর্জি, ‘‘দাদা, আমাদের দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) যে মিছিলটা করতে বলেছেন, সেটা আমরা ৫ তারিখে না করে ৬ তারিখে করছি। ৫ তারিখটায় একটু সমস্যা হচ্ছে।’’ কী সমস্যা রে? অজিতের প্রশ্নের জবাবে ওই অঞ্চল সভাপতি বলেছেন, ‘‘আসলে ৫ তারিখ তো জামাইষষ্ঠী। আমি শ্বশুরবাড়ি যাব। অন্যরাও শ্বশুরবাড়ি যাবে।’’
নেতাদের সমস্যাটাই বেশি। কারণ, যদি কেউ দলের জন্য এ বছরের মতো শ্বশুরবাড়ির আপ্যায়ন ত্যাগ করেনও সে ক্ষেত্রেও ওই দিন কর্মীদের জোটাতে হিমসিম খেতে হবে ওই নেতাকে। আবার সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। সে ভোটে টিকিট প্রত্যাশীদের ভয় আরও বেশি। কারণ, দলে তো ‘বন্ধুর’ অভাব নেই। মিছিলে না গিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেলে ‘বন্ধু’দেরই কেউ না কেউ সে কথা তুলবেন উচ্চ নেতৃত্বের কানে। মিটবে প্রার্থী হওয়ার সাধ।
অজিত অবশ্য বলছেন, ‘‘৫ ও ৬ জুন প্রতিটি বুথে, ব্লকে মিছিল করার নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। মিছিল হবে। সমস্যার কিছু নেই।’’ শ্যাম ও কুল দুই রাখতে বলেছেন তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। তাঁর কথায়, ‘‘এখন এমনিতেই দুপুর বেলায় খুব গরম থাকে। অঞ্চলগুলিকে জানিয়েছি, বিকেলের পরে মিছিল করতে। এই সময়ে মিছিল হলে তার আগে জামাইষষ্ঠীও পালন হবে, আবার মিছিলও হবে।’’ যুব তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্দীপ সিংহও বলেন, ‘‘মিছিল সব এলাকাতেই হবে। হয়তো সকালের দিকে না হয়ে বিকেলের দিকেই হবে। জামাইষষ্ঠীর আদরে কোপ পড়বে না!’’
করোনা আবহে গত দু’বছর অবশ্য অনেকেরই জামাইষষ্ঠীর আদরে কোপ পড়েছে। এ বার তাই অনেকে এই সামাজিক অনুষ্ঠানের আনন্দ ছাড়তে রাজি নন। মেদিনীপুর গ্রামীণের এক তৃণমূল প্রধান যেমন বললেন, ‘‘৬ তারিখ মিছিল করার কথা চলছে। তা হলে দু’দিকই রক্ষা হবে!’’ কেশপুরের এক অঞ্চল সভাপতি বলছেন, ‘‘ইচ্ছা থাকলেও ৫ তারিখ সকালে মিছিল করার উপায় নেই। কর্মী-জামাইরা জামাই-আদর থেকে বঞ্চিত হতে চাইছেন না।’’
দুপুরে মাংস-ভাত। বিকেলে মিছিল। এই ফর্মুলাতেও উঠছে মৃদু আপত্তি। ‘‘ভরাপেটে কী আর প্রতিবাদ হয়!’’, বলছেন আর এক ‘অনিচ্ছুক’ নেতা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।