Jawhar Sircar

TMC: ক্ষমতা থাকলে সাংসদ পদ ও সুবিধা ছাড়ুন! দলের জহর ‘স্বার্থপর’ও, রায় দিলেন সৌগত

সোমবার দলের পরিস্থিতি নিয়ে নিজের অস্বস্তির কথা জানিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার। চুপ ছিল তৃণমূল। মঙ্গলবার সরব হলেন সাংসদ সৌগত রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২২ ১৫:২০
Share:

জহরের বিরুদ্ধে দলের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও মত সৌগতের। ফাইল চিত্র

সোমবার তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার দলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সরব হয়েছেন। তখন তৃণমূলের পক্ষে মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু মঙ্গলবারই তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। জহরকে ‘স্বার্থপর’ তকমা দিয়ে সৌগত বলেন, ‘‘জহর সরকার যে স্বার্থপর এবং স্বার্থকেন্দ্রিক সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এই ধরনের আমলারা এমনই হন। এঁরা উপকার নেন। তার পরে ক্ষতি করার আগে এক বারও ভাবেন না।’’ একই সঙ্গে জহরকে সাংসদ পদ ও সেই বাবদ পাওয়া সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জও জানান সৌগত।

Advertisement

প্রসঙ্গত, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পরে তিনি অস্বস্তি নিয়ে তৃণমূলে রয়েছেন বলে দাবি করেন জহর। সোমবার সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি দাবি করেন, দলের একটা দিক পচে গিয়েছে। এমন দল নিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করা সম্ভব হবে না। বাড়ির লোকেরা ও বন্ধুবান্ধবেরা তাঁকে রাজনীতি ছাড়তে বলেছেন বলেও দাবি করেছেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ। বলেন, ‘‘এক সাইড পচা শরীর নিয়ে ২০২৪ সালে লড়াই করা মুশকিল।’’ এখানেই না থেমে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হেফাজতে থাকা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বলেন, ‘‘পার্থবাবুকে তো শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে দেখেছি। কথাও বলেছি অনেক বার। টিভিতে দেখে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ও রকম ভদ্রলোকের ইমেজ! তিনি কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু দুর্নীতির টাকা দিয়ে তাঁকে অলঙ্কৃত করা। এটা দেখলে কী রকম গা শিরশির করে।’’ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের মোহর লাগিয়ে যত ইচ্ছা টাকা বানাবো, বান্ধবীর নামে ফ্ল্যাট বানাবো, গাড়ির পরে গাড়ি কিনব, এগুলো মানতে পারছি না।’’ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাড়ির লোকেরা সাথে সাথে বলল, তুমি ছেড়ে দাও। বন্ধুরা বলছে, তুই এখনও আছিস? কত পেয়েছিস? এই ধরনের লাঞ্ছনা তো জীবনে কখনওই শুনতে হয়নি।’’

এর জবাবেই মঙ্গলবার জহরকে আক্রমণ করেছেন সৌগত। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘জহর সরকার কোনও দিন তৃণমূলের মিছিলে হাঁটেননি। ওঁকে সব চেয়ে লোভনীয় পদ রাজ্যসভার সাংসদ করেছিল দল। তিনি কিনা দলের ভিতরে না বলে প্রকাশ্যে দলবিরোধী কথা বলে দিলেন! এটা খুবই লজ্জার কথা। ওঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ তবে কি দলের বাছাইয়ে ভুল ছিল? সরাসরি সে উত্তর এড়িয়ে সৌগত বলেন, ‘‘আমার মনে হয় যে, এই ধরনের স্বার্থপর, স্বার্থকেন্দ্রিক লোকেদের সাংসদ করা উচিত নয়। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, উনি গিয়েছিলেন সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই উনি ওঁর রূপ দেখালেন।’’

Advertisement

সোমবার জহর দাবি করেন, তিনি রাজনীতির মানুষ না হলেও ভাল বক্তা হিসাবে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠায় তৃণমূল। সেই বক্তব্য উড়িয়ে সৌগত দাবি করেন, জহর আদৌ ভাল বক্তা নন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দীনেশ ত্রিবেদী তৃণমূলের সাংসদ পদ ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ায় সেই শূন্যপদে প্রসার ভারতীর প্রাক্তন অধিকর্তা জহরকে এনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভরসাও করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে সৌগত বলেন, ‘‘ভরসা করার কোনও কারণ নেই। উনি তো খুব ভাল বক্তাও নন।’’

জহরের সরব হওয়া নিয়ে নিজের খারাপ লাগা বলতে গিয়ে সৌগত আরও বলেন, ‘‘দল একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেই সময়ে বাড়ির লোকের কথা শুনে প্রকাশ্যে যা বলেছেন সেটা খুবই অনৈতিক কাজ।’’ এর পরেই সৌগত সাংসদপদ ছেড়ে দিতে বলেন জহরকে। বলেন, ‘‘ওঁর যদি ভালই না লাগে তবে সাংসদ পদটা ছেড়ে দিন। তাতেও পেনশন পাবেন। তবে এখন যে দু’লাখ টাকা বেতন এবং যাতায়াতের খরচ পান সে সব ত্যাগ করুন।’’ যদিও এখনই যে জহর সাংসদ পদ ছাড়তে চান না তা সোমবারই স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘আত্মসম্মান যদি না রাখতে পারি, আমি ছেড়ে দেব। এখনও অবধি আমায় সেই সম্মান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হুট করে ছেড়ে দিলে বলবে, মাথাগরম কিংবা বলবে নাটক করছে। বলবে, পারল না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement