২০২১ সালে মমতা রাজ্যভায় পাঠান জহরকে। ফাইল চিত্র
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পরে এমনিতেই অস্বস্তিতে তৃণমূল। সেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিলেন দলের সাংসদ জহর সরকার। সোমবার সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি দাবি করেন, দলের একটা দিকে পচে গিয়েছে। এমন দল নিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করা সম্ভব হবে না। বাড়ির লোকেরা ও বন্ধুবান্ধবেরা তাঁকে রাজনীতি ছাড়তে বলেছেন বলেও দাবি করেছেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ।
সোমবারই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৪ সালে লড়াইয়ের ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লির লড়াইটাই আমার শেষ লড়াই।’’ একইসঙ্গে দলের কয়েক জন নেতার নাম করে তাঁদের সিবিআই বা ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) গ্রেফতার করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেন। ঘটনাচক্রে, আর সেই দিনই সংবাদমাধ্যমকে জহর বলেছেন, ‘‘এদের যদি এখনই বর্জন না করে, তবে এক সাইড পচা শরীর নিয়ে ২০২৪ সালে লড়াই করা মুশকিল!’’
সেখানেই না থেমে তিনি দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাড়ির লোকেরা সাথে সাথে বলল, তুমি ছেড়ে দাও। বন্ধুরা বলছে, তুই এখনও আছিস? কত পেয়েছিস? এই ধরনের লাঞ্ছনা তো জীবনে কখনওই শুনতে হয়নি।’’ জহরের এই মন্তব্য নিয়ে অবশ্য তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। ওই বিষয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমার বিশেষ কোনও বক্তব্য নেই। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে মূল্যায়ন, পর্যবেক্ষণ ও পদক্ষেপ যা করার, শীর্ষনেতৃত্ব করছেন।’’
২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ের পরে রাজ্যসভায় প্রার্থী হিসাবে প্রসার ভারতীর প্রাক্তন অধিকর্তা জহরের নাম ঘোষণা করে চমক দিয়েছিলেন মমতা। তৃণমূলের অনেক নেতাই সে দিন বলেছিলেন, ‘‘দিদি ওঁর আস্তিনে এমন অস্ত্র যে লুকিয়ে রেছেছিলেন, তা আগে এক বারও জানতে পারিনি।’’
২০২০ সালের ৩ এপ্রিল রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন দীনেশ ত্রিবেদী। কিন্তু ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি সাংসদের পদ থেকে ইস্তফা দেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন দীনেশ। তাঁর জায়গাতেই জহরকে পাঠান মমতা। এক বছর আগে ২০২১ সালের ৯ অগস্ট রাজ্যসভার উপনির্বাচনে সহজ জয় পান জহর। ২০২৬ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাংসদপদের মেয়াদ রয়েছে তাঁর। তার মধ্যেই আচম্বিতে এমন মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন এই প্রাক্তন আমলা। এখন দেখার, দলের শীর্ষনেতৃত্ব জহরের মন্তব্য সম্পর্কে কী অবস্থান নেন।