বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন সুফিয়ান। ফাইল চিত্র
ছিল বিজয়া সম্মিলনী। সেখানেই সম্মিলন ঘটল নন্দীগ্রামে শাসকদলের বাদী-বিবাদী পক্ষের। বেশ কিছু দিন পরে দলের মঞ্চে দেখা গেল নন্দীগ্রামে তৃণমূলের ‘আদি সৈনিক’ শেখ সুফিয়ানকে। তবে সেটা খুব সহজে হল না। রীতিমতো ‘মানভঞ্জন পালা’ চলল। চালালেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। মাস খানেকের উপর দলীয় কর্মসূচি থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা সুফিয়ানকে তিনি বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে মঞ্চে তুললেন। যাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, তাঁদের হাতে হাত ধরে হাসি মুখে ছবিও তুললেন সুফিয়ান। তবে পুরোপুরি মিলমিশ হয়ে গেল কি না তা নিয়ে পুরোপুরি সন্দেহ কাটেনি দলের অন্দরে। কুণাল অবশ্য আশাবাদী, আন্দোলন ভূমি নন্দীগ্রামে দলের অস্বস্তি কাটিয়ে ফেলতে পেরেছেন তিনি।
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন সুফিয়ান। গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্টও ছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দলের দূরত্ব তৈরি হয়। নতুন ব্লক কমিটি তৈরি নিয়ে শুরু হয় গোলমাল। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তমলুক ও কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন ব্লক কমিটি ঘোষণা করে তৃণমূল। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে স্বদেশ দাসের বদলে বাপ্পাদিত্য গর্গকে সভাপতি করা হয়। নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে মহাদেব বাগকে সরিয়ে সভাপতি করা হয় শিবশঙ্কর বেরাকে। এই পরিবর্তনের পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ান সুফিয়ান। নিজের বাড়িতে ক্ষুব্ধ অনুগামীদের নিয়ে বৈঠকও করেন। পরে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “কর্মীদের ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। কোনও আলোচনা ছাড়াই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরাই নন্দীগ্রামে আন্দোলনকারী। প্রথম থেকে রয়েছি। রাজ্য কমিটি যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে, কিন্তু যাদের (সভাপতি ও কমিটি সদস্য) করা হয়েছে তারা বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রাচীরের বাইরে ছিল।’’ নতুন কমিটিতে জায়গা পাওয়ারা ভোটের সময় শুভেন্দু অধিকারীর হয়ে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছিল সুফিয়ান শিবির।
এর পর থেকেই সুফিয়ান দলের সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলছিলেন। স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব থাকলেও, গত ১৩ সেপ্টেম্বর খড়্গপুরে মমতার বৈঠকে ডাক পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। খড়্গপুরে দুই মেদিনীপুরের বিধায়ক, পুরসভার পদাধিকারী এবং পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন মমতা। সুফিয়ান পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি। তিনি হাজির ছিলেন বৈঠকে। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘সুফিয়ান তো সহ-সভাধিপতি আছে। সভাধিপতি পদ যে হেতু ওবিসি সংরক্ষিত, তাই আমি চাই উত্তম বারিক সভাধিপতি হোন। এঁরা দু’জন সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করুন।’’
রবিবার দলীয় মঞ্চে অন্যান্যদের সঙ্গে কুণালের পাশে সুফিয়ান। ফাইল চিত্র
সেই সময়ে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের জেলা পরিষদ সদস্য নাসিমা খাতুন বলেন, ‘‘দিদি, নন্দীগ্রামে ব্লক সভাপতি বদলাতে হবে। জেলা তৃণমূলের সাংগঠনিক চেয়ারম্যানও বদল করতে হবে। এঁরা বিধানসভা ভোটে সক্রিয় ছিলেন না।’’ এই প্রসঙ্গেই সুফিয়ানের নাম ধরে মমতা প্রশ্ন করেন, ‘‘সে দিন তুই কোথায় ছিলি? আমি হারার পরে রিকাউন্টিং চেয়েছিস?’’ সূত্রের খবর, সুফিয়ান দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘দিদি আপনাকে যাঁরা বলছেন, তাঁরা ভুল বার্তা দিচ্ছেন। আমি গণনা কেন্দ্রেই ছিলাম। আমি আপনার সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব।’’ এর পরে নরম স্বরেই নেত্রী বলেছেন, ‘‘আমি তোকে স্নেহ করি।’’
দিদির থেকে স্নেহের বার্তা পেলেও, নন্দীগ্রামে সে ভাবে দলের কাজে ফেরেননি সুফিয়ান। রবিবার রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে নন্দীগ্রামে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানেও প্রথমে তিনি গরহাজির ছিলেন। সেটা দেখেই কুণাল চলে যান সুফিয়ানের বাড়ি। তৃণমূল সূত্রে খবর, দীর্ঘ সময় সুফিয়ানের সঙ্গে কথা বলেন কুণাল। একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার কথা বলার পাশাপাশি, শোনেন তাঁর ক্ষোভের কথাও। এর পরে কুণাল নিজের গাড়িতে করেই সুফিয়ানকে নিয়ে আসেন সভাস্থলে। মঞ্চেও ওঠেন সুফিয়ান। এই প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘দলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। সুফিয়ান আমাদের পুরনো নেতা। অনেক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। ক্ষোভ থাকতেই পারে, তবে তিনি দূরে চলে যাননি। নন্দীগ্রামের রবিবারের সমাবেশই বুঝিয়ে দিয়েছে সংগঠন মজবুত রয়েছে। দলে ঐক্য রয়েছে।’’