ইনসান মল্লিক
এলাকাবাসী এবং দলের অনেকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রীর ‘ডান হাত’ বলে চিনতেন তাঁকে। পূর্ব বর্ধমানের কালনার সেই ইনসান মল্লিক (৪২) শুক্রবার রাতে আততায়ীদের গুলিতে খুন হওয়ার পরে, বিক্ষোভের মুখে পড়লেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। নিহতের পরিবারের ক্ষোভ, আগেও একাধিক বার ইনসানকে মারার চেষ্টা হয়েছে। পুলিশ কাউকে ধরেনি। দলও চুপ ছিল। উঁচুতলার কারও মদতেই হামলাকারীরা বার বার ছাড় পেয়েছে।
মন্ত্রীর দাবি, ‘‘প্রতিপক্ষ খুন করেছে ইনসানকে।’’ তবে প্রতিপক্ষ বলতে ঠিক কাকে বোঝাচ্ছেন, তা ভাঙেননি তিনি। ইনসানের পরিবারের দাবি, খুনে হাত রয়েছে তৃণমূলের পূর্বস্থলীর এক নেতার। যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত কারও নামে নির্দিষ্ট অভিযোগ হয়নি। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’
বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ প্রায় এক কিলোমিটার দূরের দলীয় কার্যালয় থেকে একাই মোটরবাইকে রাজখাঁড়া গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন ইনসান। পুলিশ সূত্রের দাবি, আততায়ীরা পিছন থেকে মোটরবাইকে এসে, তাঁর মোটরবাইকটি পেরনোর সময় দু’টি গুলি করে। একটি গুলি ডান উরু ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়, অন্যটি গেঁথে যায়। কালনা হাসপাতাল থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান তিনি। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁর দেহ আনা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তৃণমূলের সূত্রের দাবি, স্বপনবাবু সেখানে পৌঁছতে ইনসানের আত্মীয় এবং অনুগামীদের একাংশ কার্যত মারমুখী হয়ে ওঠেন। নিহতের ছোট ভাই রাজীব মল্লিক বলেন, ‘‘দলের সবাই জানে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই দাদাকে খুন হতে হয়েছে। রাজনীতিতে খুব দ্রুত উপরে উঠছিল দাদা। সেটাই আক্রোশের কারণ।’’
২০০৮ থেকে দলে প্রভাব বাড়ে সর্বক্ষণের কর্মী ইনসানের। কালনা ১ ব্লকের বেগপুর, কাঁকুড়িয়া, সুলতানপুর এলাকায় তাঁর ‘প্রভাব’ ছিল। দক্ষ সংগঠক ও ‘ভোট নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে কালনা পুরভোট, বিধানসভা, এমনকি, গত লোকসভা ভোটেও নজর কাড়েন তিনি। লোকসভা ভোটে পূর্বস্থলী দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে ২২,০০০ ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূল। ইনসান অনুগামীদের দাবি, তার মধ্যে সাড়ে ১০ হাজার ভোটই ছিল বেগপুরের। তা ছাড়া, কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ, বেগপুর সমবায় সমিতির সম্পাদক হিসেবে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। ২০১৩ থেকে বছর পাঁচেকের মধ্যে তিনি মন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ হয়ে ওঠেন। তবে সম্প্রতি দলের উপরতলার সঙ্গে কিছু বিষয়ে তাঁর মতানৈক্য হয়।
ইনসানের স্ত্রী শিউলি মল্লিক বেগপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান। সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভাল সংগঠন করছিলেন বলেই ঈর্ষায় স্বামীকে খুনের ছক কষেছে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দলেরই এক নেতা। আমরা সিআইডি-তদন্ত চাই।’’