বিতরণ: টাকা বিলি করছেন বুথ সভাপতি (খাতা নিয়ে)। নিজস্ব চিত্র
‘চাপে পড়ে’ এক তৃণমূল নেতা গ্রামবাসীদের কাছ থেকে নেওয়া ‘কাটমানি’ ফিরিয়ে দিয়েছেন— মঙ্গলবার সকালে সিউড়ি ২ ব্লকের কোমা পঞ্চায়েতের চাতরা গ্রামে এমনই খবর ছড়িয়েছিল। তা নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর। কিন্তু দিনের শেষে ওই জল্পনা অন্য দিকে মোড় নিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামে মাসআটেক আগে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে একটি নিকাশি নালা সংস্কারের কাজ করা হয়েছিল। ওই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা। ওই প্রকল্পের কাজে ১৪১ জন শামিল থাকলেও অভিযোগ, গত এপ্রিলে সব টাকা ভাগাভাগি করে ঢুকেছিল কয়েক জন জবকার্ডধারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। ওই সব জবকার্ডধারীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমুল বুথ সভাপতি ত্রিলোচন মুখোপাধ্যায়।
ওই প্রকল্পে যুক্ত জবকার্ডধারীদের একাংশের অভিযোগ, প্রাপ্য টাকা চাইতে গেলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ওই এলাকায় পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। বিরোধীদের শক্তিবৃদ্ধি ও তার জেরে টাকা ফেরতের দাবিতে প্রতিবাদ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার ১৪১ জন জবকার্ডধারীকে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে ফেরত দিতে বাধ্য হন ত্রিলোচনবাবু।
স্থানীয় বিজেপি নেতা ও গ্রামবাসীদের একাংশের নালিশ, জবকার্ডধারীদের বঞ্চিত করে ‘অনৈতিক’ ভাবে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। এ নিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘শাসকদলের নেতাদের এটাই দস্তুর।’’
সমস্ত অভিযোগ উড়িয়েছে তৃণমূল। চাতরা গ্রামের শাসকদলের বুথ সভাপতির দাবি, ‘‘কোনও অনৈতিক কাজ, অন্যায় করিনি। কাউকে হুমকিও দেওয়া হয়নি। এটা কাটমানি-ও নয়। প্রশাসনের অলিখিত নির্দেশ মানতে গিয়েই টাকা দেওয়ার পদ্ধতি বদল করতে হয়েছে। নির্বাচনের আগে ও পরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় টাকা দিতে দেরি হয়েছে। কেউ টাকা বিলির ভিডিও তুলে ছড়িয়ে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছেন।’’
নিয়ম বদলাতে হল কেন?
তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রকল্পের নকশা ও ই-মাস্টাররোল তৈরি করে। ‘৪ক’ ফর্ম পূরণ করে আবেদন জানিয়ে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ পান সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেই আবেদন কম হয়। কিন্তু চাপ থাকে ১০০ দিনের কাজের কর্মদিবসের গড় বাড়ানোর। ওই গ্রামের শাসকদলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য— ‘‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে অলিখিত ভাবে বলা হয়, যাঁরা কাজ করছেন তাঁদেরই আরও বেশি কাজ দিতে। কিন্তু গ্রামের মানুষ কাজ চাইবেনই। তাই তাঁদের সম্মতি নিয়ে ৩৬টি এমন অ্যাকাউন্ট বাছা হয়েছিল যাঁরা আগে কাজ পেয়েছেন। কিন্তু নিকাশি নালা সংস্কারের ওই প্রকল্পে আদতে কাজ করেন গ্রামের ১৪১ জন। তাঁদেরই প্রাপ্য টাকা এ দিন দেওয়া হয়েছে।’’
সিউড়ি ২ ব্লকের বিডিও শেখ আবদুল্লাও বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘যেটুকু জেনেছি, কম জবকার্ড ব্যবহার করে কর্মদিবসের গড় বাড়াতে চেয়েছিল পঞ্চায়েত।’’
তবে এমন কোনও আইনবিরুদ্ধ নির্দেশ দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন এমজিএনআরইজিএ সেলের নোডাল অফিসার শুভঙ্কর ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, ‘‘কেউ ভাল করে পড়ে ভাল নম্বর পায়, কেউ ভাল নম্বর পেতে চুরির আশ্রয় নেয়। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টাই হয়েছে মনে হচ্ছে।’’ শুভঙ্করবাবুর সংযোজন জেলাশাসকের পক্ষে লিখিত নির্দেশ, বেশি সংখ্যক পরিবারকে কাজ দিতে হবে। গড়ও বাড়াতে হবে। তেমন পরিকল্পনা করুক পঞ্চায়েত। তবে গড় বাড়াতে গিয়ে অধিকাংশ পঞ্চায়েত যে এমন পথের আশ্রয় নিয়েছে তা আড়ালে মেনেছেন কয়েক জন সরকারি আধিকারিক।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিনই সকালে কোমা পঞ্চায়েতের খন্না গ্রামের তৃণমূল নেতা রঞ্জন মণ্ডলের বিরুদ্ধেও ১০০ দিনের কাজ ও অন্য কয়েকটি সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠে। টাকা ফেরতের দাবিতে গ্রামবাসীরা তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। ওই নেতা কয়েক দিন সময় চেয়ে নিয়েছেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।