অশোক ভট্টাচার্যের বাড়িতে রাজু বিস্তের যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ গৌতম দেবের। — নিজস্ব চিত্র।
দীপাবলির দিন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের বাড়ি যাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। আর এর পিছনে ‘গেমপ্ল্যান’ দেখতে পাচ্ছেন শিলিগুড়ির তৃণমূল নেতারা। যদিও বাম এবং বিজেপি দু’পক্ষই বিষয়টিকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ হিসাবেই তুলে ধরছে। কিন্তু কেন এমন বৈঠক? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।
সোমবার বিকেলে বিজেপি সাংসদ রাজু যান শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়িতে। সঙ্গে ছিলেন একদা অশোকের দলে থাকা বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। যে সাক্ষাৎ নিয়ে তৃণমূলের মুখপত্রেও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আর সরাসরি আক্রমণ করেছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘উৎসবের সময় সরাসরি কারও বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না৷ তবে বার বার দেখা করা, বৈঠক করা কেন?’’ অশোককে আক্রমণ করে গৌতমের বক্তব্য, ‘‘কোনও কোনও ব্যক্তি থাকেন যাঁরা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে কারও অভিভাবক হয়ে যান৷ যেমন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে হয়েছে। স্বঘোষিত অভিভাবক হয়ে গিয়েছেন৷ এখন বিজেপির সঙ্গে মিলে গেমপ্ল্যান হচ্ছে৷ এখন এ সব করে এখানকার বিজেপির যদি স্বঘোষিত অভিভাবক হতে চান তো হতে পারেন৷ উপদেশ না দিয়ে যদি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন তা হলে, সেটা তার ব্যাপার। আমি কিছু বলতে পারি না। তবে মনে হচ্ছে, এদের মধ্যে কোনও একটা বোঝাপড়া রয়েছে।’’
তৃণমূলের কটাক্ষের উত্তরে অশোক বলেন, ‘‘আমার অনেক বয়স হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টিটা করছি ৫৪ বছর ধরে৷ আমি এত ঠুনকো রাজনৈতিক নেতা নই যে, আমাকে বাজিয়ে দেখার জন্য আসবে। এত সাহস কারও নেই।’’ একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা হঠাৎই এসেছিলেন দীপাবলির শুভেচ্ছা জানাতে। আমিও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁদের চা খেয়ে যেতে বলি। চা খেতে খেতেই ভালমন্দ কথা হয়। অনেকের পাশাপাশি তাঁকে আমি আমার স্ত্রীর বাৎসরিক প্রয়াণদিবসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তিনি আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন৷ আমদের মধ্যে রাজনৈতিক কোনও আলোচনা হয়নি৷’’
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র তথা দার্জিলিঙের সাংসদ রাজুকে একাধিক বার ফোন করলেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর সঙ্গী হিসাবে অশোকের বাড়িতে যাওয়া শঙ্কর আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘অশোকদা আমার অনেক দিনের পরিচিত। আমাদের সাংসদের সঙ্গেও তাই। রত্না’দির প্রয়াণবার্ষিকীতে তিনি যেতে পারবেন না। কালীপুজোর দিন আমরা স্থানীয় এক বিজেপি নেতার বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখনই অশোকদার সঙ্গেও দেখা করে আসি। এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজাটা ছোট মনের পরিচয়।’’ একইসঙ্গে শঙ্কর বলেন, ‘‘গোটা বাংলার সঙ্গে শিলিগুড়ির রাজনীতিকে মেলালে চলবে না। এখানে যে যাঁর নীতি নিয়ে চললেও সৌজন্যের সম্পর্ক থাকে। অশোকদার মতো প্রবীণ রাজনীতিকের বাড়িতে উৎসবের দিনে যাওয়ায় আমি তো কোনও অন্যায় দেখি না। শিলিগুড়ির মানুষও দেখবে না। তৃণমূলের যেমন সংস্কৃতি, তেমন ভাবনা।’’ প্রসঙ্গত অতীতে বিজেপির প্রাক্তন ও বর্তমান রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদারকে অশোকের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন শঙ্কর। তখনও নানা জল্পনা তৈরি হয়েছিল এবং বাম-বিজেপি দুই শিবিরের পক্ষেই ‘সৌজন্য’ বলে দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা বদলে যাওয়ায় জল্পনাতেও বদল এসেছে।
দিন কয়েক আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামেদের উদ্দেশে কাছে আসার বার্তা দেন। তার আগে সুকান্তের একটি ফেসবুকেও তেমন ইঙ্গিত ছিল। যদিও পরে বিজেপির পক্ষে বলা হয়, ওই আহ্বান সিপিএমের নেতাদের জন্য নয়, কর্মীদের উদ্দেশে। এমনই আবহে রাজু-অশোক বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক তরজা চলছে। তা নিয়ে শঙ্কর বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকারের গ্রহণ লেগেছে৷ সেই কারণেই বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’ শঙ্কর সেই দাবি করলেও রাজনীতির কারবারিরা রাজনীতিই দেখছেন।