মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র। — ফাইল চিত্র।
চোখে নতুন করে সমস্যা তৈরি হওয়ায় বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যোগ দিতে পারলেন না দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সভায় ভার্চুয়ালি উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। যদিও বক্বতৃতা করতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরের সভায় তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশ্রামে রয়েছেন। তিনি চোখের সমস্যার কারণে এই সভায় আসতে পারছেন না। তিনিই ছিলেন এই সভার প্রধান উদ্যোক্তা।তাই আপনাদের (উপস্থিত নেতা-কর্মী) সম্মান জানাতে তিনি ভার্চুয়ালি সভায় যোগ দিলেন (অভিষেককে তখন স্ক্রিনে দেখানো হয়)।’’ বক্সি বলেন, ‘‘অভিষেককেচিকিৎসকেরা ১০-১২ দিন বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। তাই তিনি বক্তৃতা করতে পারছেন না।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর ছিল, নেতাজি ইন্ডোরের সভায় আগামী লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা ঘোষণা করতে পারেন মমতা। গত ১৬ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোরে ওই সভা করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু সে দিনই ইডেন গার্ডেন্সে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনালের সূচি থাকার জন্য তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক হয়, বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন শেষ হওয়ার পর দিন, ২৩ তারিখ, বৃহস্পতিবার ওই বৈঠক হবে। সেই মতোই নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠকে তৃণমূলের ব্লক স্তর থেকে শুরু করে রাজ্য স্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন দলনেত্রী। কিন্তু চোখের সমস্যার কারণে সেখানে সশরীরে হাজির থাকতে পারলেন না অভিষেক।
বুধবার বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন শেষ হওয়ার পর অভিষেককে দেখতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন মমতা। অতিরিক্ত সময় কনট্যাক্ট লেন্স পরে থাকার কারণে অভিষেকের চোখে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে তৃণমূলের একটি সূত্র। শহরের একটি হাসপাতালে প্রায় তিন ঘন্টা ধরে তাঁর চোখের চিকিৎসাও হয়েছে। তৃণমূলের ওই সূত্রের বক্তব্য, চিকিৎসকেরা অভিষেককে বলেছেন, তাঁর এখন বাড়িতে বিশ্রামের প্রয়োজন। সেই সূত্রেই বলা হচ্ছিল, অভিষেক নেতাজি ইন্ডোরের সভায় যোগ দিতে পারেন ভার্চুয়ালি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে মুর্শিদাবাদে একটি দলীয় কর্মসূচি থেকে ফেরার সময়ে সিঙ্গুরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে একটি দুধের গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অভিষেকের গাড়ি। অভিষেকের বাঁ চোখে গুরুতর আঘাত লাগে। সেই থেকে একাধিক বার তাঁর বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। চলছে ধারাবাহিক চিকিৎসাও। গত ২০ অগস্ট আমেরিকা থেকে চোখের চিকিৎসা করিয়ে কলকাতায় ফিরেছিলেন অভিষেক।
তার পরেই কেন্দ্রের কাছে বকেয়া অর্থ নিয়ে বড় মাপের আন্দোলন শুরু করেন তিনি। দিল্লিতে নিয়ে যান সেই আন্দোলনের ঢেউ। তার পরে ধর্না-অবস্থান শুরু করেন কলকাতার রাজভবনের অদূরে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করতে সম্মত হওয়ায় মমতার পরামর্শে ধর্না প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন অভিষেক। তবে পাশাপাশিই সেই মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কেন্দ্র বকেয়া টাকা না মেটালে ১ নভেম্বর থেকে রাস্তায় নামবে তৃণমূল। এবং মমতা হবেন সেই আন্দোলনের মুখ। কারণ, নিজের পায়ের আঘাতের কারণে চিকিৎসকদের পরামর্শে তখন বাড়িতে থাকতে হচ্ছিল মমতাকে।
তবে শেষ পর্যন্ত গত ১ নভেম্বর তেমন কোনও বড় কর্মসূচি করেনি বাংলার শাসকদল। কেন, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। তবে সে দিন বিকেলেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের বকেয়া অর্থ নিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। বরং তা নতুন উদ্যমে শুরু হবে। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে হতে পারে সেই ‘নতুন উদ্যমে আন্দোলন’ শুরু করার ঘোষণা। মমতার ওই সভায় দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের ভিড় থাকবে। মমতা নিজেও বক্তৃতা করবেন। বেলা ১২টা থেকে সভা শুরু হয়ে গিয়েছে। দলনেত্রী মমতার ইন্ডোরে পৌঁছনোর কথা বেলা ১টা নাগাদ। প্রত্যাশিত ভাবেই, তিনিই হবেন সভার শেষ বক্তা। মমতা কী নির্দেশ দেন, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। যেমন কৌতূহল তৈরি হয়েছিল এ নিয়েও যে, অভিষেক শেষ পর্যন্ত ভার্চুয়ালি সভায় কখন যোগ দেবেন এবং বক্তৃতা করলে কী বলবেন, তা নিয়েও। তবে অভিষেক অল্প সময়ের জন্য ভার্চুয়ালি সভায় যোগ দিলেও ভাষণ দেননি।