অভিষেককে সামনে রেখে কেন্দ্রকে দলবদ্ধ আক্রমণে তৃণমূল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দলবদ্ধ আক্রমণে নামল তৃণমূল। পেট্রল-ডিজেলের দাম রোজ বাড়তে থাকা নিয়ে বিরোধী শিবির গোটা দেশেই সুর চড়াচ্ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে সেই সুর দলবদ্ধ ভাবে তুঙ্গে তুলল তৃণমূল। ‘মোদীবাবু পেট্রল বেকাবু’— এই হ্যাশটাগকে ট্রেন্ড করানোর চেষ্টা হল টুইটারে। দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেকে পাশাপাশি ওই হ্যাশটাগে টুইট করলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দীনেশ ত্রিবেদী-সহ সামনের সারির তৃণমূল নেতারা।
গত ১৭ দিন ধরে একনাগাড়ে বাড়ছে পেট্রল এবং ডিজেলের দাম। কলকাতায় পেট্রলের দাম পৌঁছেছে ৮১ টাকা ২৭ পয়সায়। আর ডিজেল পৌঁছেছে ৭৪ টাকা ১৪ পয়সায়। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার সকালে যে টুইট করেন, তাতে গত ১০ দিনের মূল্যবৃদ্ধির হিসেব তুলে ধরেন তিনি। ১০ দিনে ঠিক কত শতাংশ বাড়ানো হল জ্বালানি তেলের দাম আর এই দামের মধ্যে কতটা কেন্দ্রীয় কর হিসেবে আদায় করা হচ্ছে, সেই হিসেবও অভিষেক তুলে ধরেন। ‘‘কোভিড-১৯-এর কারণে মানুষ যখন প্রবল আর্থিক সঙ্কটে, তখন করের পরিমাণ বেনজির ভাবে বাড়িয়ে অশোধিত তেলের দাম কমে যাওয়ার সুবিধা ছিনিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীজি। তার পরে দাম যখন আবার বাড়ছে, তখনও সাধারণ মানুষের উপরেই তিনি কোপটা ফেলছেন।’’ —লেখেন অভিষেক। কেন্দ্রের এই নীতিকে ‘লজ্জাজনক’ বলেও তিনি আক্রমণ করেন।
অভিষেক আক্রমণে নামতেই দলবদ্ধ ভাবে ময়দানে নেমে পড়েন তৃণমূলের অন্য শীর্ষনেতারাও। অভিষেকের এই টুইটকে রিটুইট করেন রাজ্যসভার তৃণমূল দলনেতা তথা দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। টানা ১৭ দিন ধরে যে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েই চলেছে, সে কথাও লেখেন ডেরেক। সঙ্গে অভিষেকের তৈরি হ্যাশট্যাগ— ‘মোদীবাবু পেট্রল বেকাবু’।
আরও পডু়ন: গালওয়ানে হামলার নির্দেশ দিয়েছিল চিন, বলছে মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট
দুপুর ২টো ৪৮ মিনিট নাগাদ টুইট করেন তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যর শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। অভিষেকের মতো পার্থও পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির একটা হিসেব তুলে ধরেন নিজের টুইটে। তবে সেটা গত ১০ দিনের হিসেব নয় বা জ্বালানি তেলের মোট মূল্যের হিসেবও নয়। ২০১৪ সালে অর্থাৎ মোদীর ক্ষমতাসীন হওয়ার বছরে জ্বালানি তেলের উপরে কেন্দ্রীয় করের পরিমাণ কত ছিল আর এখন সেই পরিমাণটা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, সেই হিসেব তুলে ধরেন তৃণমূল মহাসচিব।
আরও পডু়ন: সেনা পিছোতে রাজি চিন, কোর কমান্ডার বৈঠকে ‘পারস্পরিক ঐকমত্য’
রাজ্যসভার সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী, রাজ্যের দুই মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও একই হ্যাশট্যাগে টুইট করেন। কোভিডের জেরে তৈরি হওয়া আর্থিক সঙ্কটের মাঝেই জ্বালানি তেলের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধি কেন, সে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রীকে তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে তাঁরা আক্রমণ করেন। অভিষেকের টুইট এবং তার পরে রাজ্যের সামনের সারির মন্ত্রী ও সাংসদদদের পর পর টুইটে স্পষ্ট যে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্র তথা বিজেপি-কে কোণঠাসা করার সুযোগ তৃণমূল হাতছাড়া করতে চায় না। করোনা মোকাবিলা এবং ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকার ত্রাণ ও পুনর্গঠনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারকে রোজ আক্রমণ করছে বিজেপি। দেশের শাসক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও নিয়মিত মুখ খুলছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে। পাল্টা আক্রমণের সুযোগ পেয়েই সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণে নেমেছে তৃণমূল। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এই ভাবে লাগাতার চলতে থাকলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অস্ত্র আরও শানিত হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।