TMC

টিম পিকে-র হাত ধরে পাল্টা দিচ্ছে তৃণমূলও

আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন। হাতিয়ার সামাজিক মাধ্যমও। কৌশলটা কীআগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন। হাতিয়ার সামাজিক মাধ্যমও। কৌশলটা কী

Advertisement

রবিশঙ্কর দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রায় চাকরির পরীক্ষার মতো। নিজের দফতরে বসে মন্ত্রী আর উল্টো দিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরই জনসংযোগের প্রস্তুতি সম্পর্কে তথ্য-তালাশে আসা ‘টিম পিকে’র প্রতিনিধি। মিনিট কুড়ি বন্ধ দরজার ভিতরে ‘ইন্টারভিউ’ সেরে উঠলেন রাজনীতিতে প্রায় অর্ধ শতকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তৃণমূল নেতা।

Advertisement

নির্বাচনের মুখে প্রচারের নতুন মাধ্যমে সড়গড় হতে শাসক দলের মন্ত্রী, বিধায়ক ও সাংসদদের প্রায় সকলকেই এই রকম ‘ইন্টারভিউ’য়ে বসতে হচ্ছে দলের পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের প্রতিনিধির সামনে। এক বছরের বেশি সময় ধরে টিম পিকে তৃণমূলকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক যে সব পরামর্শ দিয়েছে, তার মধ্যে সব থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ছিলই। তা সুসংহত ভাবে পরিচালনার জন্য আইপ্যাক নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছে। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় দল ও দলের শাখা সংগঠন এবং বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধিই সেই পরিকল্পনা মতো চলছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতি ও প্রশাসনের মুখ হিসাবে কেন্দ্রীয় ভাবে সামাজিক মাধ্যমে চলছে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ ও ‘দিদিকে বলো’— এই দু’টি পেজ। তৃণমূলের দাবি, গত মার্চ মাসে শুরু ‘বাংলার গর্ব মমতা’র ফেসবুক পেজ-এর ‘ফলোয়ার’ এখন ২৪ লক্ষ। ইনস্টাগ্রাম ও টুইটার হ্যান্ডলে ফলোয়ার ৭৫ হাজার করে। এই পদ্ধতিতে বিধানসভা, ব্লক এবং একেবারে আঞ্চলিক স্তরেও পেজ চালু করা হয়েছে। আইপ্যাকের তত্ত্বাবধানে ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্র ও ২৩টি জেলাতেও এই পেজগুলি চলছে। ‘বাংলার গর্ব মমতা’ নামে একটি চ্যানেল শুরু করা হয়েছে ইউটিউবেও।

তৃণমূলের ‘দিদিকে বলো’ প্রচার শুরু হয়েছে গত বছর জুলাই মাসে। ফেসবুকে তার ফলোয়ার এখন ৫ লক্ষ। মূলত রাজ্য সরকার ও দলের কাজকর্ম নিয়েই এই দুটি পেজ-এর প্রচারের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে আইপ্যাক-এর ডিজিটাল টিম। রাজ্য স্তরে কম-বেশি ১৫ জনের একটি দল কাজ করছে এই ডিজিটাল টিমে। জেলায় তাঁদের নির্দেশ কার্যকর করতে তৃণমূলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তেরা আছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: মাওবাদীদের রুখতে নতুন বঙ্গ বাহিনী ‘স্ট্র’

অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বার্তা বিনিময় করার দু’টি আলাদা পেজ রয়েছে। মমতার নামের পেজটি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর ও অভিষেকের পেজ তাঁর দফতর থেকে পরিচালিত হয়। প্রয়োজনমতো পরামর্শ দেয় আইপ্যাক। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই মাধ্যমকে যে ভাবে মিথ্যা, কুৎসা, অপপ্রচারে কাজে লাগানো হচ্ছে, তার মোকাবিলায় সত্য তুলে ধরতে আমরাও পরিকল্পিত ভাবেই কাজ করছি।’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘আমাদের দলে কড়া নির্দেশ দেওয়া আছে— কোনও ভাবেই ভুয়ো খবর এবং ঘৃণা উদ্রেককারী কোনও ছবি বা বক্তব্য ছড়ানো যাবে না। বিজেপির সঙ্গে আমাদের আইটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া কর্মকাণ্ডের এটা বড় তফাত। আমরা একেবারে বুথ স্তর পর্যন্ত ভুয়ো এবং ঘৃণামূলক প্রচারের বিরুদ্ধে লড়ছি।’’ ডেরেকের দাবি, তাঁদের দল বিজেপির মতো অর্থবান নয়। তাই তাঁরা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেন একটা পরিবার হিসাবে। অর্থাৎ, তৃণমূল নেতা-কর্মী এবং তাঁদের স্ত্রী, স্বামী, সন্তান, আত্মীয়-বন্ধু সকলে মিলে নানা বিষয়ে দলের বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেন।

আরও পড়ুন: মাস্ক-লজেন্স মেলে, স্বাগতার পাঠশালায় খুদে থেকে স্কুলছুট

বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি একটি ‘ভার্চুয়াল’ সমাবেশ করেন এ রাজ্যের জন্য। তার ঠিক পর পরই একুশে জুলাই উপলক্ষে ‘ভার্চুয়াল’ সভা করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’টি সভাই মূলত ফেসবুকে সম্প্রচার করেন দুই দলের নেতা-কর্মীরা। ওই দু’ইয়ের বিশ্লেষণের পরে দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবসে কৌশল বদল করে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা একেবারে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে দর্শক সংখ্যার রেকর্ড রাখতে কোন অ্যাকাউন্ট থেকে তা কী ভাবে শেয়ার করতে হবে, তা সংগঠনের অন্দরে জানিয়ে দেওয়া হয় ওই কর্মসূচির দিন কয়েক আগে থেকেই। এই রকম বক্তৃতার সময় নীচে কী ‘কমেন্ট’ করতে হবে, তা-ও দলের তরফে বলে দেওয়া হয়েছিল।

জনপ্রতিনিধিদের ফেসবুক পেজ-এ পোস্টের বিষয়ও অনেক সময় সরাসরি ঠিক করে তৃণমূলের এই আইটি সেল। কখন কী পোস্ট করা হবে, তা-ও কেন্দ্রীয় ভাবে তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। নিজের ফেসবুকের পাতায় ভেসে ওঠা অনেক তথ্যই অনেক সময় সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি পরে জানতে পারেন। ওই টিম ‘কন্টেন্ট’ পাঠিয়ে জনপ্রতিনিধির তরফে দায়িত্বে থাকা কর্মীকে তা পোস্ট করতে বলে। এক বিধায়কের কথায়, ‘‘বহু সময়ে বিষয় তৈরি করে আইপ্যাকই পাঠিয়ে দেয়। তবে সরাসরি আমরাও পোস্ট করতে পারি। তাতে বাধা নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement