হিমাচল প্রদেশের বহু প্রাচীন এই মন্দির। ছবি: ফ্রিপিক।
হিমাচল প্রদেশ বললেই মানসপটে ভেসে ওঠে তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গ, উচ্ছ্বল নদী। প্রকৃতির উজাড় করা রূপ। তারই আড়ালে রয়ে গিয়েছে এক প্রাচীন মন্দির।
মসরুর মন্দির। কেউ কেউ স্থাপত্যশৈলীর কারণে এই মন্দিরকে 'হিমাচলের ইলোরা' বলেও অভিহিত করেন। মহারাষ্ট্রের অজন্তা এবং ইলোরা তার শিল্পসৌকর্যের জন্য ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে স্থান করে নিয়েছে। এখানে এলে বোঝা যাবে, এই তুলনা অযৌক্তিক নয়। পাথর কেটে তৈরি মন্দিরটি 'মসরুর রক কাট টেম্পল' বলেই পরিচিত। যদিও এই পরিচিতি সীমাবদ্ধই। প্রতি বছর ভ্রমণপিপাসু অসংখ্য পর্যটক হিমাচলে এলেও, এখানে আসেন না। আসলে, কাংড়া জেলার এই মন্দিরের নামই শোনেননি অনেকে।
জানা যায়, খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে তৈরি হয়েছিল মসরুর মন্দির। কোনও একক মন্দির নয় বরং একাধিক মন্দির এখানে রয়েছে। মন্দিরের মূল আরাধ্য রাম, লক্ষ্মণ এবং সীতা। সেই মন্দিরকে ঘিরেই তৈরি বাকি মন্দিরগুলি। যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা বলছে, এই মন্দির চত্বরের নির্মাণ অসম্পূর্ণ। মন্দিরের বহু ভাস্কর্য এবং রিলিফ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ১৯০৫ সালে ভূমিকম্পেও এই মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একটি বিশাল পাথর কেটে ১৫টি মন্দিরের জন্ম। মন্দিরের মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে জলাশয়। নাগর এবং দ্রাবিড় শিল্পের প্রভাব লক্ষ করা যায় এর নির্মাণশৈলীতে। পাথুরে দেওয়ালে ফুল, প্রকৃতি, পৌরাণকি কাহিনি অপূর্ব দক্ষতায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । উল্লেখ্য, এই মন্দিরের সঙ্গে মুম্বইয়ের নিকটবর্তী এলিফ্যান্টা গুহামন্দির এবং সুদূর কম্বোডিয়ার আঙ্কোর ভাট মন্দিরের সাদৃশ্য রয়েছে।
মন্দিরে প্রবেশের তিনটি দ্বার রয়েছে। উত্তর পূর্ব, দক্ষিণ পূর্ব এবং দক্ষিণ পশ্চিমে। তবে এর মধ্যে দু’টি দ্বার অসম্পূর্ণ।
১৯১৩ সালে হেনরি শাটলওয়ার্থ নামে এক ব্যক্তি এই মন্দিরটির কথা ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানান। তার পরই নড়েচড়ে বসেন ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। স্থানটি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। উঠে আসে নানা তথ্য।
কাংড়া উপত্যকায় এই মন্দিরের আশপাশ মনোরম। ঝকঝকে আকাশে মন্দির চত্বর থেকে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ধৌলাধর শৃঙ্গ। ইতিহাসের প্রতি আকর্ষণ থাকলে এবং স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহী হলে, ২৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই মন্দিরটি হিমালচল প্রদেশে ভ্রমণের তালিকায় রাখতেই পারেন।
কী ভাবে যাবেন?
মসরুর মন্দিরের নিকটবর্তী বিমানবন্দর গগ্গল। এখান থেকে মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। ধর্মশালা থেকে স্থানটির দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার, চণ্ডীগড় থেকে দূরত্ব ২৩৪ কিলোমিটার। যে কোনও স্থান থেকেই সড়কপথে মন্দিরে যেতে পারেন।
কলকাতা থেকে যেতে হলে বিমানে অথবা ট্রেনে দিল্লি এসে সেখান থেকে গাড়িতে মন্দিরে পৌঁছতে পারেন। দিল্লি থেকে বিমানে গগ্গলে এসে গাড়িতে যেতে পারেন। আবার কালকা মেলে কালকা পৌঁছে টয়ট্রেনে সিমলা আসতে পারেন। সিমলা থেকেও গাড়িতে মসরুর যেতে পারেন।