জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
ইডির হেফাজতে বন্দি রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব পালনের জন্য কমিটি গঠন করে দিল তৃণমূল। বারাসত লোকসভার অধীন জ্যোতিপ্রিয়ের হাবড়া বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য সাত নেতাকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে, রাজ্য বা জেলা স্তরের কোনও নেতাকে কমিটিতে রাখা হয়নি। বরং দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হাবড়ার স্থানীয় নেতৃবৃন্দকেই।
কমিটিতে রয়েছেন হাবড়া পুরসভার চেয়ারম্যান নারায়ণচন্দ্র সাহা, হাবড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেহাল আলি, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ জ্যোতি চক্রবর্তী, পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নীলিমেশ দাস, তৃণমূল নেত্রী তপতী দত্ত, হাবড়া শহর তৃণমূল সভাপতি সীতাংশু দাস এবং এলাকার তৃণমূল নেতা অজিত সাহা। জ্যোতিপ্রিয়র অনুপস্থিতিতে এই কমিটিই হাবড়া বিধানসভা এলাকার উন্নয়ন ও দলের সংগঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
বারাসত সংগঠনিক জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘বালুদা (জ্যোতিপ্রিয়) যে ভাবে হাবড়া বিধানসভা সামাল দিতেন, সে ভাবে একার হাতে কোন ও নেতা সেই দায়িত্ব সামলাতে পারবেন না। তা ছাড়া, কাউকে একক ভাবে দায়িত্ব দিলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়ার সমস্যাও রয়েছে। তাই ওই এলাকারই পৃথক সাত জন নেতাকে নিয়ে কমিটি গঠন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে আগামী লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখেই। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের তিনটি বিধানসভায় ভাল ব্যবধানে এগিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। কাকলি ঘোষ দস্তিদার তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী হলেও বিধাননগর, অশোকনগর ও হাবড়া বিধানসভায় ভাল ব্যবধান পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। জ্যোতিপ্রিয়ের হাবড়ায় প্রায় ১৯ হাজার ভোটে এগিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। সেই ফলাফলের পর প্রকাশ্যেই জ্যোতিপ্রিয় জানিয়েছিলেন, এমন ফলের পর তিনি আর বিধানসভা নির্বাচনে হাবড়ায় দাঁড়াতে ইচ্ছুক নন। কিন্তু দলীয় নির্দেশে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ওই কেন্দ্র থেকে জোড়াফুলের প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহকে হারান তিনি।
তবে এ বারের লোকসভা নির্বাচনের আগে জ্যোতিপ্রিয়ের জামিন পাওয়া বা বন্দিশালা থেকে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তৃণমূল নেতৃত্ব কোনও ভাবেই আর ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পুনরাবৃত্তি চাইছেন না। তাই ভোট ঘোষণার অনেক আগে থেকেই কমিটি গঠন করে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত ২০০১ এবং ২০০৬ সালে গাইঘাটা বিধানসভা থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। কিন্তু আসন পুর্নবিন্যাসের কারণে ২০১১ সালে গাইঘাটা আসনটি তফশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হয়। তাই জ্যোতিপ্রিয়কে হাবড়ায় প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। সেই থেকে পর পর তিন বার হাবড়া থেকে জয়ী হয়ে বিধানসভার সদস্য হন জ্যোতিপ্রিয়। জায়গা করে নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভাতেও। গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জ্যোতিপ্রিয় রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে জেলবন্দি। তাই তাঁর দায়িত্ব অন্য নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিল তৃণমূল।