গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগে সরব হল বাংলার শাসকদল তৃণমূল। ছবি এবং ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনে তৃণমূল দাবি করল, রাজ্যপাল বলুন ওই ছবি-ভিডিয়ো আসল না ভুয়ো। যদি সত্যি হয়, তা হলে তা কবেকার ছবি। রাজ্যপাল থাকাকালীন কি তিনি বুকে বিজেপির প্রতীক আঁকা ব্যাজ পরেছিলেন? যদি তা-ই হয়, তা হলে রাজ্যপালের আর এক মুহূর্ত ওই সাংবিধানিক পদে থাকার অধিকার নেই বলেও সরব হয়েছে বাংলার শাসকদল।
মঙ্গলবার রাতে তৃণমূলের তারকা প্রচারক কুণাল ঘোষ রাজ্যপালের একটি ছবি পোস্ট করে প্রথম ওই অভিযোগ তোলেন। বুধবার কুণাল বলেন, ‘‘রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর বুকে বিজেপির প্রতীক আঁকা ব্যাজ রয়েছে। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে রাজ্যপালকে বলতে হবে, এই ছবিটা অরিজিনাল (আসল) না ফেক (ভুয়ো)? যদি আসল হয়, তা হলে তা তিনি দিনক্ষণ বলুন। কবে কোথায় ওই ব্যাজটি ব্যবহার করেছেন। যদি দেখা যায়, রাজ্যপাল থাকাকালীন তিনি এই ব্যাজটি ব্যবহার করেছেন, তা হলে আমরা দাবি করছি তাঁর ইস্তফা দেওয়া উচিত। বিজেপির ব্যাজ ধারণ করা রাজ্যপাল এক মুহূর্ত রাজভবনে থাকতে পারেন না।’’
কুণাল-সহ তৃণমূলের অনেক মুখপাত্রই এই ছবি এবং ভিডিয়ো তাঁদের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন। পাশাপাশিই একটি সংবাদমাধ্যমের খবরের লিঙ্কও ছড়িয়েছে। যেটি গত ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছিল। যে প্রতিবেদনে কলকাতার রামমন্দিরে রাজ্যপালের প্রার্থনার ছবি রয়েছে। সেই ছবিতেও রাজ্যপালের বুকে পদ্ম এবং নীচে ইংরেজিতে ‘বিজেপি’ লেখা রয়েছে দেখা যাচ্ছে (কোনও ছবি বা ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)।
এই ‘বিতর্কে’ বুধবার দুপুর পর্যন্ত রাজ্যপাল বা রাজভবন কোনও বিবৃতি দেয়নি। তবে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র রাজর্ষি লাহিড়ি বলেছেন, ‘‘রাজভবনের বিষয়ে আমরা বিশেষ কিছু বলি না। এটা তৃণমূলই ভাল বলতে পারবে। কারণ, রাজ্যপালের হাতেখড়ি তারাই দিইয়েছিল। রাজ্যপালও গিয়েছিলেন কুণাল ঘোষের পাড়ার পুজো উদ্বোধন করতে। তিনি কিন্তু সজল ঘোষের (বিজেপি নেতা) পুজো উদ্বোধনে যাননি।’’
রাজভবনকে ‘বিজেপির স্থানীয় দফতর’ এবং রাজ্যপালকে ‘বিজেপির লোক’ বলে অভিহিত করা তৃণমূলের তরফে নতুন নয়। জগদীপ ধনখড়ের সময় থেকেই শুরু হয়েছিল। বর্তমান রাজ্যপালের বিরুদ্ধে গোড়ার দিকে তৃণমূল ‘নরম’ থাকলেও ক্রমে নবান্ন-রাজভবন সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। এমনকি, রাজভবনের এক অস্থায়ী মহিলা কর্মীর শ্লীলতাহানিরও অভিযোগ উঠেছে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। দিল্লিতেও এক নৃত্যশিল্পীকে রাজ্যপাল হেনস্থা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল কয়েক মাস আগে। সেই অভিযোগ নিয়ে আবার নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই বিজেপির প্রতীক বুকে লাগানোর অভিযোগ উঠল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে। এখন দেখার, ওই বিষয়ে রাজ্যপাল বা রাজভবনের তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয় কি না।