প্রয়াগরাজে নিহতদের পরিবার পরিজনেদের সঙ্গে তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন। নিজস্ব চিত্র
উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের খেভরাজপুরে গিয়ে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পাশে থাকার বার্তা দিল তৃণমূল। রবিবার তৃণমূলের প্রতিনিধি দল রওনা দেয় প্রয়াগরাজের উদ্দেশ্যে। শনিবার উত্তরপ্রদেশের একই পরিবারের পাঁচ জনকে খুন করা হয়। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের থরবই থানার অন্তর্গত খেভরাজপুরে দু’বছরের এক শিশু-সহ একই পরিবারের পাঁচ জনকে কুপিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা এক প্রৌঢ় দম্পতি, তাঁদের মেয়ে, পুত্রবধূ এবং নাতনিকে খুন করে। তার পরেই উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল।
রবিবার সকালে প্রয়াগরাজের উদ্দেশ্যে রওনা হন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন, বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর, তৃণমূল নেতা সাকেত গোখলে, ও মন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি। উত্তরপ্রদেশ থেকে এই প্রতিনিধিদলে যোগ দেন তৃণমূল নেতা ললিতেশ ত্রিপাঠী। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের অভিযোগের কথা জানতে চান তৃণমূল সাংসদরা। নিহতদের পরিবারের সদস্য সুনীল যাদবের সঙ্গে কথা বলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। তাঁকে দোলা বলেন, ‘‘আপনাদের যা ক্ষতি হয়েছে, তা আমরা ফেরাতে পারব না। কিন্তু আপনারা যাতে সুবিচার পান, সেই ব্যবস্থা আমাদের দল আপনাদের জন্য করবে।’’ নির্যাতিত যাদব পরিবারের এক সদস্য অভিযোগ করেন, তাঁদের পরিবারের দু’জন সদস্যকে বিবস্ত্র করে মারা হলেও, পুলিশ প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
সত্যানুসন্ধান কমিটির সদস্য সাকেত ওই পরিবারের সদস্যদের বলেন, ‘‘আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে এ ব্যাপারে দেখা করব। যখন আপনার বয়ান লেখা হবে, যে ভাবে আপনি আমাদের ঘটনার বিবরণ জানিয়েছেন, সে ভাবেই আপনি নিজের বয়ান বিস্তারিত জানাবেন। আপনার যা দাবিদাওয়া রয়েছে, তা আদায়ের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাব।’’ নির্যাতিতার পরিবারের এক সদস্য প্রশ্ন তোলেন, "যদি তদন্ত সঠিক ভাবে না হয়, তা হলে বিচার পাব কী ভাবে?" এমন প্রশ্নের জবাবে তৃণমূল নেতা ললিতেশ বলেন, ‘‘সুনীল, আপনি ঝুঁকবেন না। আর আপনি না ঝুঁকলে আমরাও আপনার হয়ে লড়াই করে সুবিচার আনতে পারব।’’
সত্যানুসন্ধান কমিটির সফরের পরেই সর্বভারতীয় তৃণমূলের তরফে একটি বিবৃতিও জারি করা হয়। বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘আমাদের নেতারা খেভরাজ (প্রয়াগরাজ, উত্তরপ্রদেশ) পরিদর্শন করে শোকার্ত পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেছেন। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন সরকারের অযোগ্যতার কারণে এই হৃদয়বিদারক মানসিক আঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল ওই পরিবারের সদস্যদের। এই ধরনের যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাওয়া কারও জন্যই কাম্য নয়, কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকারের অযোগ্যতার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে।’ ওই বিবৃতিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জাতীয় মহিলা কমিশন এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের কাছে জবাব চান। তাঁরা চুপ কেন?’
পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় রাজ্য পরিদর্শনে এসেছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জাতীয় মহিলা কমিশন। পাশাপাশি, তাঁদের রিপোর্ট গিয়েছিল রাজ্য সরকারের বিপক্ষে। তাই এ বার বিজেপি শাসিত রাজ্যে এই ধরনের ঘটনায় তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাল তৃণমূল।